পশ্চিমবঙ্গ বাড়িভাড়া আইন (১৯৫৬)

এই আইন সম্প্রতি একটি বিতর্কের কারণ।

দীর্ঘদিনের বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া সংক্রান্ত বিবাদ ও আদালতের মধ্যে কালক্ষয়

একটি অন্যতম বিরক্তিকর বিষয়।

সাধারণভাবে বাড়িভাড়া দেওয়ার অর্থ হল সম্পত্তির ব্যবহারে অর্থ উপার্জন।

অথচ বাস্তবে দেখা যায় ঐ সম্পত্তি ব্যবহারের পর বিভিন্ন মনোমালিন্যের ফলে ব্যাপারটা আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

শুধু তাই নয়, ঐ বিবাদের ফলে চলতি প্রজন্মের সম্পত্তি গত সমস্যা পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত বিষাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

শুধুমাত্র আদালত পর্যন্ত গেলেই সমস্যাটা জটিল থেকে জটিলতর হয়।

তবে ব্যাপারটা কি?

  • আইনগত কি কি জানা আয়দের প্রয়োজন? কিভাবে আমরা এই আইনগত জ্ঞান এর সাহায্যে সমস্যাটি আদালত ছাড়া সমাধান করতে পারি?
  • প্রথমেই আসা যাক ভাড়াটের কি কি দায়িত্ব থাকে বাড়ি ভাড়া নেবার সময়।

খোজ খবর নেওয়া যে প্রস্তাবিত বাড়ির মালিক কি পকাত পচে যাচিত আব ঐ সম্পত্তি দেবার অধিকার কি আছে? (“দেবার’ অর্থে ভাড়া “দেবার”)

ভাড়া নেবার ভিত্তি কি হবে? মৌখিক না লিখিত? কোন অঞ্চলে অর্থাৎ কলকাতা শহর না উপশহর যদিও পৌর অঞ্চলের অধীন কিনা?

ভাড়া ঠিক মত দিতে হবে।

অর্থাৎ যদি চুক্তি (যদি কিছু থাকে) নচেৎ ব্যবহার এর ভিত্তিতে ঐ ভাড়া দেবার নির্দিষ্ট সময়ে ভাড়া দিতে হবে। (পরবর্তী মাসের অনুর্ধ ১৫ দিনের মধ্যে তা জমা দেওয়া আইন সিন্ধ)

যদি কোন কারণবশতঃ বাড়িওয়ালা ভাড়া নিতে অস্বীকার করে, তবে ভাড়াটে মানি অর্ডার করে বাড়ি ভাড়া পাঠাতে পারে।

  • কি কি কারণে বাড়িওয়ালা ভাড়াটে উচ্ছেদ করতে পারে?

এবিষয়ে ১৭(৪) এবং ২৫নং ধারায় যা বলা হয়েছে।

বাড়িওয়ালা ভাড়াটে উচ্ছেদ করতে পারে একাধিক কারনে। তবে নিচের কারণ গুলি প্রধানভাবে বিবেচিত হয়।

এই কারনগুলির প্রমান যথাযথ হবার পর সাধারনঃত আদালত কর্তৃক উচ্ছেদের আদেশ/ডিক্রি জারি হয়ে থাকে।

তবে মনে রাখতে হবে বাড়িওয়ালা ভাড়াটে সমস্যা এতই সংবেদনশীল যে কারণগুলি প্রমানের অভাবে জটিল/ জটিলতর আকার ধারণ করে মূল বিষয় থেকে দূরে চলে যায়। সংক্ষেপে কারণগুলির প্রতিপাদ্যতা নীচে দেওয়া গেল।

ভাড়াটের অসংযত আচরণ যা সংশ্লিষ্ট প্রতিবেশীদের বিরক্তির কারণ।

বারংবার বলা সত্ত্বেও কোনরূপ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। “যথাপূবং তথা পরম”- এই রূপ আচরনে বাড়িওয়ালা বাধ্য হবেন আদালতের আশ্রয় নেবার জন্য।

ভাড়াটে, ভাড়ার বিনিময় অংশ কোনরূপ ক্ষতিকর কাজ, আপত্তিকর ব্যবহার, ধংসসাধন, বিলোপসাধন, ব্যবহারের পরিপূর্নতার অভাব এইরূপ কাজ।

ভাড়াটের অবহেলার জন্য ভাড়া করা অংশ ও সার্বিকভাবে সম্পত্তির ক্ষতি সাধন।

বসরাসের প্রতিবন্ধকতামূলক কিছুর ব্যবহার ঐ অংশ।

অ-সামাজিক কাজের জন্য ভাড়া নেওয়া অংশ ব্যবহার।

অনুমতি ব্যতিরকে বসবাসের কারনে নেওয়া অংশ অন্য কারনে ব্যবহার।

অনুমতি ব্যতিরকে উপ-ভাড়াটিয়াকে ভড়া দেওয়া।

সংস্কার এর প্রয়োজন এ বাড়ি খালি করা প্রয়োজন।

বাড়িওয়ালার নিজের ব্যবহার এর জন্য বাড়ি খালি করা।

পরিবর্তন বা অন্য প্রয়োজন যা যথার্থভাবে খালি না করলে করা সম্ভব নয় সে ক্ষেত্রে।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়ির প্রাপ্ত ভাড়া না পাওয়া।

বছরের মধ্যে পাওনা ভাড়ার নুন্যতম দুই মাস না পাওয়া।

খালি করার নোটিশ দেবার পরও খালি করা।

এছাড়া সংস্কারকরণ এর দায়বদ্ধতা ভাড়াটে থাকা স্বীকৃতি হলেও যদি তার দায় অস্বীকৃত হয় তবে বাড়িওয়ালা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাহায্যে ভাড়াটে উচ্ছেদের জন্য আবেদন করতে পারে।

সরকারী কর্মচারী চাকুরীর প্রয়োজনে কোনও বাসস্থান এ বসবাস করলে তবে নিজস্ব বাড়ি (তা নিজের নামেই হোক বা পরিবারস্থ স্ত্রী/সন্তান এরনামেই হোক) যদি ভাড়াটের দখলে থাকে তবে সরকার কর্তৃক বাড়ি ছেড়ে দেবার নোটিশ পেলে সে তার নিজস্ব বাড়ি ও খালি করে দেবার আবেদন করতে পারে।

মনে রাখতে হবে ভাড় দেবার ত্রুটি হলে বাড়ি ছেড়ে দেবার জন্য আদালত আদেশ দিতে পারেন না।

অন্যান্য বিষয়াদির যথাযথ প্রমানের পর আদালত কর্তৃক আদেশ জারি হতে পারে।

ভাড়া প্রাপ্ত হবার পর বাড়িওয়ালা স্বয়ং অথবা ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী লিখিত ভাবে প্রাপ্তভাড়ার রসিদ প্রদানে বাধ্য থাকবেন।

যদি টাকা প্রাপ্ত হবার পর রসিদ হস্তান্তর করা না হয় তবে “রেন্ট কন্ট্রোলার” এর মাধ্যমে বাড়িওয়ালা ভাড়াটের ক্ষতি পূরনে বাধ্য থাকবেন।

মোটামুটি ভাবে বাড়িওয়ালা ভাড়াটে সমস্যা যদি আদালতের আঙিনায় যায় তবে এই ধরনের যাবতীয় বিষয়াদি বিবেচনার পর সমাধান এর সূত্র একটা পাওয়া যেতে পারে।

তবে অভিজ্ঞাতায় বলে, এই ধরনের সমস্যাগুলি খুব সহজে এড়ানো যায় যদি প্রাথমিকভাবে ভাড়া দেবার আগে, আইনজীবীর সাহায্যে কোনরুপ “চুক্তিপত্র” কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

ভবিষ্যত কারনে সমস্যা হতে পারে, তাতে উভয়ের কি কি ভূমিকা থাকবে বা তাতে কি ধরনের উদ্ভূত সমাধান তার প্রতিটি বিষয় স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির বর্ননা অনেক জটিল সমস্যাকে সহজ করে তোলে।

  • ডাড়াতে আইনে বাড়ি ওয়ালা কি করতে পারে বা পারে না।

৪। ৩নং ধারা অনুযায়ী বাড়িওয়ালা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারবে।

৫নং ধারা অনুযায়ী বাড়িওয়ালার ইচ্ছেমত কোন কিছু দাবী করার অধিকার নেই।

৬নং ধারা অনুযায়ী বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার কোন আসবাব পত্র বিক্রি করে আত্মসাৎ করতে পারে না।

৭নং ধারা অনুযায়ী বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার কোন প্রতিনিধির কাছ থেকে কোন অর্থ আদায় করতে পারে না। তবে এ বিষয়ে সে যদি আদালতের কাছ থেকে কোন ডিক্রি পায় তবে ১২নং ধারা মতে এই শর্ত বাতিল হতে পারে।

৮নং ধারায় বলা হয়েছে যে, ১৯৪৬ সালের কলকাতার ভাড়াটিয়া আইন অনুসারে যেখানে ভাড়া ১০০টাকার উপরে ছিল সেখানে শতকরা ১৫টাকা বেশি আর যেখানে ১০০ টাকার কম সেখানে শতকরা ১০ টাকা বেশি ভাড়া নিতে পারে।

৯নং ধারায় ন্যায্য ভাড়া কখন বাড়ানো যাবে তা বলা হয়েছে। যদি দেখা যায় কর বৃদ্ধির জন্য বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়াচ্ছে বা বাড়ি মেরামতের জন্য খরচ হওয়ায় ভাড়া বাড়াচ্ছে তবে তা আইন সিদ্ধ। তবে এসব ক্ষেত্রেও ১০ শতাংশের বেশি ভাড়া বাড়ানো যাবে না।

যে সব কারণে বাড়ি ওয়ালা ডাড়াটেকে উচ্ছেদ করতে পারে?

বাড়িরওয়ালার অনুমতি না নিয়ে যদি ভাড়াটিয়া বাড়ির কোন অংশ ভাড়া দেয়। ১৪নং ধারায় তাহলে উচ্ছেদে মামলা রুজু করা যায়।

যদি ভাড়াটিয়া অসৎ উদ্দেশ্যে বা অবৈধ কোন ব্যাপারে কাউকে কিছু করতে দেয়।

বাড়ির কোন ক্ষতি করে।

যদি বাড়িওয়ালার বাড়ি নিজে বসবাস করার প্রয়োজন-হয়।

ভাড়াটিয়ার কোন কাজ কর্ম যদি অপরের বিরক্তির কারণ হয়।

বাড়িওয়ালা অন্যত্র চাকরি করার সময় বাড়ি ভাড়া দিয়েছিল এখন চাকরি নেই তাই বাস করার জন্য।

এক বৎসরের মধ্যে ভাড়াটিয়া যদি দুবার ভাড়া না দেয়।

বাড়িওয়ালা যদি তার বাড়ি অন্য কাউকে ভাড়াটে সহ বিক্রি করে থাকে, তবে নতুন ভাড়াটিয়া তিন বৎসর জন্য ঐ বাড়িতে থাকবে বলে যদি বাড়ি না ছাড়ে তাহলে নতুন বাড়ির মালিক তার বিরুদ্ধে উচ্ছেদের মামলা করতে পারে।