অ্যাসিটোব্যাক্টর জীবাণুসার

১৯৮৮ সালে এর আবিষ্কার হয় এবং অ্যাসিটোব্যাক্টর ডায়াজোট্রোফিকাস (Acetobacter diazotrophicus) নামক জীবাণুটি আখের জন্য জীবাণুসার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই জীবাণুটি বছরে হেক্টর প্রতি ২০০ কেজি পর্যন্ত নাইট্রোজেন মাটিতে যোগ করতে পারে। অ্যাসিটোব্যাক্টর একটি বিশেষ ধরণের উপকারী জীবাণুসার যা আখের উচ্চ নাইট্রোজেন ঘটিত সারের চাহিদার অনেকটা মিটিয়ে দিতে সক্ষম। এই ব্যাক্টেরিয়া (Acetobacter diazotrophicus A Chroococcum) কম PH, অম্ল মাটি, উচ্চ লবণ ও উচ্চ শর্করা সহ্য করতে পারে। এদের মধ্যে নাইট্রেট রিডাক্টেজ উৎসেচকটি না থাকার দরুণ উচ্চ মাত্রায় নাইট্রোজেন সংবন্ধন করতে পারে। এই ব্যাক্টেরিয়ার কালচার (বৃদ্ধিকারক মাধ্যম) পীড়ন (Stress) প্রতিরোধে সক্ষম এবং এর ব্যবহারের ফলে ফসলের সহ্য ক্ষমতাও বহুলাংশে বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে।

ক্লসট্রিডিয়াম জীবাণুসার

ক্লসট্রিডিয়াম (Clostridium) হল একটি অবায়ুজীবি ব্যাকটেরিয়া এবং এই জীবাণুটি মাটির অম্লত্ব সহ্য করতে পারে। তবে অ্যাজোটোব্যাক্টরের তুলনায় কম নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে।

নীল-সবুজ শ্যাওলা

নীল-সবুজ শ্যাওলা (Blue-Green Algae বা সংক্ষেপে BGA) বা সায়ানোব্যাকটেরিয়া (Cyanobacteria) হল স্বাধীনজীবি, সালোকসংশ্লেষকারী, নাইট্রোজেন বন্ধনকারী জীবাণু। নীল-সবুজ শ্যাওলার উদাহরণ হল, অ্যানাবিনা (Anabaena), নস্টক্ (Nostoc), ওলোরিয়া (Aulouria), ক্যালোথ্রিক্স (Calothrix), টলিপোথ্রিক্স (Tolypothrix) ও সিলিড্রেস্পারমাম (Cylindrospermum)-এরা রোপণ করা আমন ধানের জমিতে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে হেক্টর প্রতি ২০ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত বায়বীয় নাইট্রোজেন সংবন্ধন করতে পারে। এর ফলে নাইট্রোজেন ঘটিত সারের সাশ্রয় হয় ও ধানের ফলন ৫ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে এই শ্যাওলা গাছের শেকড়ে অক্সিজেনের যোগান দেয়, সেই সঙ্গে নাইট্রোজেনও সংবন্ধন করে। এই প্রক্রিয়াটি হল অমিথোজীবি। এই শ্যাওলার একটি প্রজাতি অ্যানাবিনা অ্যাজোলি (Anabaena azollae) রয়েছে, যা অ্যাজোলা নামক ফার্ণের সঙ্গে মিথোজীবিতার মাধ্যমে মাটিতে নাই পাবন্ধন করতে পারে। নীল-সবুজ শ্যাওলা নাইট্রোজেন সংবন্ধন ছাড়াও আরাস পর যখন তাপমাত্র। রে, যেমন-জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, জমির আদার ব্যবহার করলে ফসফেট মুক্ত করে, শস্যের বৃদ্ধিকারক।

অ্যাজোলা

অ্যাজোলা হল এক প্রকার জলজ ভাসমান ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদ। স্থির জলাশয়ে এদের দেখা যায়। এই উদ্ভিদের শাখান্বিত ভাসমান কান্ড আছে, কান্ডে দ্বি-খন্ডিত ফলকবিশিষ্ট পত্র আছে ও প্রকৃত মূল আছে। এর ৭টি প্রজাতির মধ্যে আমাদের দেশে অ্যাজোলা পিনাটা (Azolla pinnata) প্রজাতিটি সচরাচর দেখা যায়। এই ফার্ণটি নীল-সবুজ শ্যাওলা অ্যানাবিনা অ্যাজোলি (Anabaena azollae) এর সাথে মিথোজীবিতার মাধ্যমে নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে। শ্যাওলাটি ফার্ণের পাতার ওপর খন্ডে (upper lobe) বসবাস করে এবং সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে ফার্ণ বায়ুর নাইট্রোজেন গ্রহণ করে এবং পরে ফার্ণটি পচে গিয়ে মাটিতে নাইট্রোজেন যুক্ত করে। প্রায় ৪০-৬০ টন মত অ্যাজোলা থেকে বছরে এক হেক্টর জমিতে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত নাইট্রোজেন যোগ হতে পারে।

অ্যাজোলা জল দাঁড়ানো জমিতে প্রায় ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে ভালো কাজ দেয় এবং সবথেকে ভালো কাজ করে যখন জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফসফেটের যোগান থাকে। ধান চাষের আগে খালি জমিতে সবুজ সার হিসাবে অথবা মূল জমিতেই ধানের সঙ্গে সাথী ফসলের মত অ্যাজোলা চাষ করা যেতে পারে।

ফসফেট দ্রবণকারী জীবাণু সার

ফসফেট দ্রবণকারী জীবাণুর মধ্যে ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাক দুই-ই পাওয়া যায়। কয়েকটি প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়া যেমন, সিউডোমোনাস, ব্যাসিলাস, ফ্ল্যাভোব্যাক্টেরিয়াম, মাইক্রোকক্কাস এবং ফিউজারিয়াম, ক্লেরোসিয়াম, অ্যাস্পারজিলাস, পেনিসিলিয়াম, ট্রাইকোডার্মা জাতীয় ছত্রাক ক্যালসিয়াম, আয়রন, এ্যালুমিনিয়াম, হাড়ের গুঁড়ো, রক ফসফেট বা এ ধরনের পদার্থের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করে। এ ধরনের অণুজীব ফসফেটকে গাছের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় নিতে সাহায্য করে। জীবাণুগুলি নিজেদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফসফেট গাছের খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করে।

এছাড়া রাসায়নিক সার হিসেবে ফসফেট জমিতে প্রয়োগের ফলে তা মাটির দস্তা (জিপ্ত) এর সঙ্গে বিক্রিয়ায় গাছের অগ্রহণযোগ্য অবস্থায় চলে যায়। ফলে মাটিতে গ্রহণযোগ্য ফসফেটের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য জীবাণু ঘটিত ফসফেট সার ব্যবহার করলে মাটিতে আবদ্ধ ফসফেট যেমন মুক্ত হয়, তেমন মিনারালাইজেশন পদ্ধতিতেও মাটি থেকে ফসফেট সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া, বিভিন্ন জৈব ও অজৈব অম্ল এবং ফাইটোন উৎসেচক উৎপাদনের মাধ্যমে গাছের গ্রহণযোগ্য ফসফেট তৈরী হয়।

অন্যান্য উপকারী ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাকের সঙ্গে ফসফেট দ্রবণকারী অণুজীবের সম্পর্ক

১) রাইজোবিয়াম জীবাণুর উপর ফসফেট দ্রবণকারী জীবাণুর প্রভাব-মুগ, সয়াবিন, মুসুর ইত্যাদি ফসলের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, রাইজোবিয়াম এবং ফসফেট দ্রবণকারী জীবাণু একসঙ্গে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এর সঙ্গে সুপার ফসফেট, রক ফসফেট মিশ্রিত করলে উৎপাদন বেশী হয়।

২) অ্যাজোটোব্যাক্টরের উপর ফসফেট দ্রবণকারী জীবাণুর প্রভাব-অ্যাজোটোব্যাক্টর এবং পি. এস. বি. বা ফসফেট দ্রবণকারী ব্যাকটেরিয়া এক সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগে উৎপাদন বেশী হয়। পি. এস. বি. অ্যাজোটোব্যাক্টরের সংখ্যা ৫ থেকে ১০ গুণ বাড়িয়ে দেয় বলেই এটা সম্ভব হয়।

ফসফেট দ্রবণকারী ব্যাক্টেরিয়া বা পি. এস. বি.’র ব্যবহার বিধি

১) বীজ শোধন-১০-১২ কেজি বীজের জন্য ২০০ গ্রাম পি. এস. বি. প্রয়োজন হয়। উক্ত পরিমাণ পি. এস. বি. ৩০০-৪০০ মিলি জলের সঙ্গে মিশিয়ে দ্রবণ তৈরী করতে হবে। হাত দিয়ে উক্ত দ্রবণ বীজের গায়ে মাখাতে হবে। ছায়ায় শুকিয়ে বীজ বোনা যাবে।

চারা শোধন-৫ থেকে ১৫ লিটার জলে ১ কেজি পি. এস. বি গুলে ১ একর জমির জন্য প্রয়োজনীয় চারা শোধন করা যাবে। চারার শেকড় ২৫ ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। ২)

৩) মাটিতে প্রয়োগ-১০০ কেজি জৈব সারের সঙ্গে ৬ কেজি পি. এস. বি. মিশিয়ে জমিতে সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। আলু ও আখে ৩০ ও ৬০ দিনের মাথায় গোড়ায় মাটি ধরানোর সময় প্রয়োগ করতে হবে।

কম্পোস্ট সার তৈরীর ২ মাস পর যখন তাপমাত্রা ৩০° সে. এর কাছাকাছি থাকে তখন অ্যাসপারজিলাস্ কালচার ব্যবহার করলে ফসফেট ও অন্যান্য খনিজ লবণ বৃদ্ধি পেয়ে কম্পোস্ট সমৃদ্ধ হয়।

অদ্রাব্য ফসফেট দ্রাবক জীবাণুসার

মাটিস্থিত অদ্রবণীয় ফসফেট দ্রাবক জীবাণুগুলি ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক বা অ্যান্টিনোমাইসিটিস্ হতে পারে। এদের সংক্ষেপে ফসফেট দ্রাবক জীবাণু বা PS Micro-Organisms (Phos- phate Solubilizing) বলে। মাটিতে সার হিসাবে প্রয়োগ করা সুপার ফসফেট বা অন্যান্য ফসফেট ঘটিত সারের দ্রবণীয় ফসফেট মাটিস্থিত ক্যালসিয়াম, আয়রন, অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অদ্রাব্য বা অদ্রবণীয় ফসফেট ঘটিত যৌগে রূপান্তরিত হয়। আমাদের দেশের মাটিতে প্রচুর পরিমাণে অদ্রবণীয় খনিজ ফসফেটও আছে। ফসফেট দ্রাবক জীবাণুগুলি মাটিতে প্রয়োগ করার পর এর নানা রকম জৈব অম্ল (ম্যালিক, সাইট্রিক, অ্যাসেটিক, প্রোপিওনিক, সাক্সিনিক ইত্যাদি) তৈরী করে। এই অম্লমাটিতে প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা নানা জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এরা অংশ নেয় এবং অদ্রাব্য ফসফেটকে দ্রবীভূত করে গাছের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় এনে দেয়। বাণিজ্যিক সারের প্রতি ১ গ্রামে ন্যূনতম ১০০ টি জীবাণুকোষ থাকা উচিত। নিরপেক্ষ ও ক্ষারীয় PH এর মাটিতে ব্যাকটেরিয়া ঘটিত PSM ও অম্ল মাটিতে ছত্রাক কালচার ব্যবহার করলে ব্যবহৃত ফসফেটের দক্ষতা বাড়ে, যা ধান, গম, আলু ও মুসুর ডালে বিশেষ ভাবে দেখা যায়।

ভ্যাম্ জীবাণুসার

ভেসিকুলার আরবাস্কুলার মাইকোরাইজা বা সংক্ষেপে ভ্যাম্ (Vesicular Arbuscular Mycorrhiza বা VAM) হল এক প্রকার মিথোজীবি ছত্রাক। এই ছত্রাকগুলি গ্লোমাস্ (Glo- mus), গিগাস্পোরা (Gigaspora), অ্যাকাওলোস্পোরা (Acaulospora), এনট্রোফস্ফোরা (Entrophosphora), ক্লিওসিস্টিস (Scleocystis) ও এন্ডোগণ (Endogone) গণগুলির অন্তর্ভুক্ত। এরা উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানগুলি সংবন্ধন করতে পারে না, বরং বিভিন্ন গাছের (যেমন, লিচু) শেকড়ে এদের অনুসূত্রের জাল বিস্তার করে এরা শেকড়ের মধ্যে ভেসিল্ (Vesicle) ও আরবাক্স (Arbuscle) নামে বিশেষ ধরণের গঠন তৈরী করে তাই এদের ভেসিকুলার আরবাস্কুলার মাইকোরাইজা বলে। গাছের শেকড়ে এরা অবস্থান করে গাছকে মাটি থেকে প্রয়োজনীয় জল, খাদ্য উপাদান যেমন ফসফরাস দস্তা, তামা, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম এবং বিশেষ করে ফসফেট গ্রহণে সাহায্য করে ও গাছের বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। কাজেই এই ছত্রাকের উপস্থিতিতে মাটি পরোক্ষভাবে শস্যের পক্ষে উর্বর হয়ে ওঠে। যে সমস্ত ফসলে এই জীবাণুসার ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়, সেগুলি হল ফল, ভুট্টা, যব, আলু, মিলেট (জোয়ার, বাজরা), লেবু, শিম্বগোত্রীয় ফসল, আম, তামাক, কফি, রাবার, চা ইত্যাদি।

আরবাক্সের মধ্যে ফসফাটেজ উৎসেচকের পরিমাণ বাড়িয়ে এটি ফসফেট দ্রবীভূত করতে সাহায্য করে এবং গ্রহণযোগ্য ফসফেট উপাদান গাছকে সরবরাহ করে। ফলে আবদ্ধ বা কম পরিমাণ ফসফেট যুক্ত মাটিতে এটি ভাল কাজ করে। Stress বা পীড়নের সময় প্লুটামেট সিন্থেটেজ উৎসেচক বাড়িয়ে অ্যামোনিয়াম আয়ন তৈরী করে সংকট কাটায়। এছাড়াও জলমগ্ন অবস্থায় NO, (নাইট্রেট) আয়ণকে নাইট্রেট রিডাক্টেজ এর সহায়তায় ধীরে ধীরে NH₂+ (অ্যামোনিয়াম) আয়ণে পরিবর্তিত করে গাছের গ্রহণযোগ্য করে তোলে। তবে থাইমেট, কার্বোফিউরান, ক্যাপটান জাতীয় কৃষি বিষের ব্যবহার এই অণুজীবের বৃদ্ধি ও কার্যকারিতাকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতি করে।

VAM ব্যবহারের পদ্ধতি

১) সরাসরি বীজের গায়ে আস্তরণ- মিথাইল সেলুলোজ জাতীয় আঠা VAM এর সঙ্গে মিশিয়ে বীজ মাখিয়ে ছায়াতে শুকিয়ে নিয়ে লেবু জাতীয় গাছের বীজে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

২) চারকোল কালচাব- চারকোল বা অগার জাতীয় বস্তুর সাথে জিপসাম ও অন্যান্য দ্রব্য মিশিয়ে তার সাথে VAM মিশিয়ে এটিকে বীজ ও চারার সাথে মাখিয়ে ব্যবহার করা হয়।

৩) নালী বা পিলিতে প্রয়োগ- যে সব ফসল নালী বা পিলি করে চাষ করা হয় যেমন ভুট্টা, পেঁয়াজ ইত্যাদি-তাদের বীজের ৩ সেমি নীচে VAM কালচার প্রয়োগ করলে (২ টন প্রতি হেক্টরে) ভাল ফল পাওয়া যায়।

৪) প্রি-কপিং পদ্ধতি- কিছু শস্যে VAM প্রয়োগের পর তার শিকড়ের মাধ্যমে পরবর্তী শস্যতেও VAM এর উপকার পাওয়া যায় এবং সেই জমিতে VAM এর ক্রমাগত বংশবৃদ্ধির পরিস্থিতি তৈরী হয়। ১মি. X ১মি. ছোট প্লটে নালী করে তার ভেতর ২ কেজি মত খড় পুড়িয়ে জৈববস্তু সংযোগ করে সেই মাটিতে জোয়ার ও রোড ফলের বীজে VAM মাখিয়ে চাষ করলে ৬০-৭৫ দিন পরে ১৫ সেমি. গভীরতার মাটিকে পরবর্তী চাষে VAM এর কালচার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

৫) কেঁচো সারের সঙ্গে মাটিতে প্রয়োগ- কেঁচো সারের সাথে VAM মিশিয়ে সরাসরি মাটিতে প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

পটাশ দ্রাবক জীবাণুসার

ফ্রাটুরিয়া অরাশিয়া নামক ব্যাক্টেরিয়া মাটিস্থিত অদ্রবণীয় বা স্থায়ী (Fixed) পটাশকে দ্রবীভূত করে ফসলের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় এনে দেয়।

সালফার দ্রাবক জীবাণুসার

অ্যাসিটোব্যাক্টর জাতীয় ব্যাক্টেরিয়ার একটি প্রজাতি মাটিস্থিত স্থায়ী ও অদ্রবণীয় সালফারকে গাছের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় এনে দেয়।

পি.জি.পি.আর. জীবাণুসার

পি.জি.পি.আর. শেকড়াঞ্চলে বসবাসকারী ও গাছের বৃদ্ধি উন্নয়নকারী ব্যাকটেরিয়া (Plant Growth Promoting Bacteria বা PGPR) ঘটিত জীবাণুসার। গাছের শেকড়াঞ্চলে এক ধরণের ব্যাক্টেরিয়া থাকে, যাদের রাইজোব্যাক্টেরিয়া (Rhizobacteria) বলা হয়। এই রাইজোব্যাক্টেরিয়া উপকারী হতে পারে, আবার অপকারী হতে পারে। যে সমস্ত উপকারী রাইজোব্যাক্টেরিয়া গাছের বৃদ্ধি ও উন্নয়নে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করে, তাদের কালচারকে বলা হয় পি.জি.পি.আর. জীবাণুসার। এরকম কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পি.জি.পি.আর. জীবাণু হল ব্যাসিলাস সিরিয়াস (Bacillus cereus), ব্যাসিলাস ফার্মাস্ (B. fimus), ব্যাসিলাস লিক্লিফর্মিস্ (B. lichniformis), ব্যাসিলাস সিরুল্যান্স (B. cirulans), ব্যাসিলাস সাবটিলিস (B. subtilis), সিউডোমোনাস গ্ল্যাডিওলি (Pseudomonas gladioli), সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স (P. fluoroscence), সিউডোমোনাস পুটিডা (P. putida), সিউডোমোনাস সেপাসিয়া (P. cepacia) ইত্যাদি। এই পি.জি.পি.আর. জীবাণুসার বীজের অঙ্কুরোদগম ও চারার মূলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং শস্যের বৃদ্ধি ও ফলন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাড়িয়ে দেয়।

পি.জি.পি.আর. জীবাণুগুলি বিভিন্ন ফাইটো-হর্মোন তৈরীর মাধ্যমে অথবা মাটি মধ্যস্থ খাদ্য উপাদান গাছকে সহজে যোগানের মাধ্যমে সরাসরি গাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। অন্যথায়, এরা বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotic), সিডারোফোর (Siderophore) এবং হাইড্রোজেন সায়ানাইড (HCN) তৈরী করে গাছের শেকড়াঞ্চলে বসবাসকারী রোগবীজাণু বা অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণুগুলির কর্মক্ষমতা কমিয়ে পরোক্ষভাবে গাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সমস্ত নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী বা অদ্রাব্য খাদ্য উপাদান দ্রবকারী ব্যাক্টেরিয়া পি.জি.পি.আর. হতে পারে, কিন্তু সমস্ত পি.জি.পি.আর. মাটিতে নাইট্রোজেন বন্ধন বা অদ্রাব্য খাদ্য উপাদানসমূহের দ্রবকরণ নাও করতে পারে। পি.জি.পি.আর.-এর আবার বিশেষ স্ট্রেন (strain) রয়েছে, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট ফসলে ভালো কাজ দেয়। যেমন মুসুর-এর ক্ষেত্রে পি.জি.পি.আর-এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্ট্রেন হল সি.আর.বি.-১, সি.আর.বি.-২, কে.বি.- ১৩৩, পি.ইউ.আর.-৪৭, ইত্যাদি। কলাই-এর ক্ষেত্রে উপযোগী পি.জি.পি.আর. স্ট্রেন হল পি.ইউ.কে.বি.-৬৪৬, পি.ইউ.কে.-১৭১, কে.বি.-১৩৩ ও সি.আর.বি.-২ ইত্যাদি।

পি. জি. পি. আর. কিভাবে কাজ করে?

বিভিন্ন পি. জি. পি. আর মাটির মধ্যে গাছের শেকড়াঞ্চলে থেকে বিভিন্ন রকম কাজ করে:

ক) জৈবিক নাইট্রোজেন সংবন্ধন (Biological nitrogen fixation): কিছু পি. জি. পি. আর. রয়েছে, যারা মাটিতে জৈবিকভাবে নাইট্রোজেন সংবন্ধনে সাহায্য করে। যেমন, অ্যাজোস্পাইরিলামের একটি স্ট্রেন “এন-৪” এবং রাইজোবিয়াম লেগুমিনোসেরাম-এর স্ট্রেন “ই-১১” ধানের জমিতে নাইট্রোজেন বন্ধন করে ধান গাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

খ) গাছের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রকারী ও জৈবিকভাবে সক্রিয় অন্যান্য বস্তুসমূহ (Plant growth regulator ও Biologically active substances) উৎপাদন: বিভিন্ন রকম জৈব বস্তু যেমন উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক (Plant growth regulator), উদ্ভিদ হর্মোন (Phytohormones) বা জৈবিকভাবে সক্রিয় বস্তুসমূহ (Biologically active substances) তৈরী ও তাদের নির্গমনের (Release) মাধ্যমে পি. জি. পি. আর. গুলি শেকড়াঞ্চলে বসবাসকারী অন্যান্য রোগ জীবাণু বা অপকারী জীবাণুর ক্ষতিকারক ক্রিয়াকলাপগুলি প্রতিহত করে বা কমিয়ে গাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। স্ট্রেপ্টোমাইসিস, সিউডোমোনাস, আরথ্রোব্যাক্টর, ফ্ল্যাভোব্যাক্টেরিয়াম, অ্যাজোটোব্যাক্টর, অ্যাজোস্পিরিলাম, অ্যারোমোনাস, ব্যাসিলাস, এন্টারোব্যাক্টর ইত্যাদি গণভূক্ত জীবাণুরা বিভিন্ন রকম উদ্ভিদ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক পদার্থ যেমন অক্সিন, জিব্বারেলিন, সাইটোকাইনিন, ইথিলিন ও অ্যাক্সিসিক অ্যাসিড তৈরী করে গাছের বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে। ফাইকোসায়ামিন (Phycocyamin), ২,৪-ডাই অ্যাসিটাইল ফ্লোরোগ্লুসিনল (2, 4-di acetyl phloroglucinol) ইত্যাদি তৈরী করে পি. জি. পি. আর. জীবাণুগুলি রোগজীবাণুর বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার ব্যহত করে।

গ) মাটির অদ্রাব্য খাদ্য উপাদান দ্রবীকরণ ও গাছের গ্রহণের জন্য সরলীকরণ: মাটির মধ্যে যে সমস্ত অদ্রাব্য উদ্ভিদ খাদ্য উপাদান যেমন, ফসফরাস ও আয়রণ বা লোহা থাকে, সেগুলিকে পি. জি. পি. আর জীবাণু সিডারোফোর (Siderophore) বা জৈব অম্ল নিঃসরণের মাধ্যমে দ্রবীভূত করে গাছের পক্ষে গ্রহণযোগ্য ও সহজলভ্য করে তোলে, এবং গাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই সিডারোফোর হল নিম্ন আণবিক গুরুত্ব সম্পন্ন পদার্থ, যা ফেরাস আয়নের (Fe*) সাথে একত্রিত হয়ে যৌগ গঠন করে। কিছু সিউডোমোনাস ব্যাক্টেরিয়া হলুদ-সবুজ রঞ্জক (Yellow-Green Pigment) নামে এক ধরণের সিডারোফোর তৈরী করে (সিউডোব্যাট্রিন) যা আলু গাছের বৃদ্ধি ও ফলন বাড়াতে সাহায্য করে। নানা ধরনের লোহার চিলেটকারী যৌগ (Iron chelating compounds) সৃষ্টিকারী এরকম কয়েকটি জীবাণু হল ব্যাসিলাস, রাইজোবিয়াম, সিউডোমোনাস, অ্যাগ্রোব্যাক্টেরিয়াম, ইশ্চেরিচিয়া কোলাই ও বিভিন্ন ছত্রাকসমূহ। ফসফেট দ্রবকারী ব্যাক্টেরিয়া যেমন, এন্টারোব্যাক্টর (Enterobactor sp.) ও ব্যাসিলাস সাবলিটিস (Bacillus sublitis) এবং ভ্যাম ছত্রাক (Vesicular arbuscular mycorrhizal fungi) যেমন গ্রোমাস ইন্টার‍্যাডিসেস্ (Glomus intraradices) একত্রিতভাবে পেঁয়াজে প্রয়োগ করে গাছের যথাযথ বৃদ্ধি ও উদ্ভিদকোষ গুলিতে যথেষ্ট পরিমাণ নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

ঘ) উদ্ভিদরোগের জৈব নিয়ন্ত্রন: মৃত্তিকাবাহিত বিভিন্ন উদ্ভিদ রোগের জৈব নিয়ন্ত্রনে পি. জি. পি. আর. সাহায্য করে। এই পি. জি. পি. আর. সিডারোফোর তৈরী করে এমনভাবে লোহার সাথে যৌগ গঠন করে, যাতে তা বিভিন্ন ক্ষতিকারক জীবাণুর জন্য কম লভ্য হয়ে ওঠে। এইভাবে পি. জি. পি. আর. মাটির ক্ষতিকারক জীবাণু বা অন্যান্য রোগ জীবাণুদের বংশবিস্তারে ও ক্রিয়াকলাপে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া, বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন, পাইরোনিট্রিন-Pyrrolnitrin) ক্ষরণ করে উদ্ভিদ রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড মাইক্রোক্স (GEMS):

বিভিন্ন জীবাণুর মধ্যে একটি বা একের অধিক জিন বিশেষ জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (Recombinant DNA Technology) প্রতিস্থাপিত করে যে নতুন বিশেষ ধরণের জীবাণু পাওয়া যায় যাকে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার করা হয় তাকেই GEMS বলে। এই বিশেষ ধরণের জীবাণুটি সাধারণতঃ উপযোগী প্রোটিন বা বিশেষরকম বিপাকীয় দ্রব্য তৈরী করে যা ফসলের রোগ, পোকা, আগাছা ইত্যাদিতে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিছু উদাহরণ দেওয়া হল-

১) ক্ল্যাভিব্যাক্টরে Bt জীবাণুর Cry জিন প্রবেশ করিয়ে প্রতিরোধী করে তোলা হয়।

২) সিউডোমোনাস ব্যাক্টেরিয়াতে সেরেসিয়া’র কাইটিনেজ জিনটি প্রতিস্থাপন করে ছত্রাক প্রতিরোধী করে তোলা গেছে।

৩) রাইজোবিয়াম মেলিলোটিতে Nif Gene এর পরিবর্ধন করে বেশী নাইট্রোজেন সংবন্ধন

সম্ভব হয়েছে। ৪) বিশেষ থার্মোসেন্সিটিভ জিন অ্যাজোলা থেকে নিষ্কাসিত করে অ্যানাবিনায় স্থাপন করে

বিশেষ স্ট্রেন তৈরীর কাজ অনেকদূর এগিয়েছে।

GEMS এর ব্যবহারের অকল্পনীয় সম্ভাবনার ফলে ভবিষ্যতে আরও বহু চমকপ্রদ বিবর্তন কৃষিক্ষেত্রে আনা সম্ভব।

জীবাণুসার ব্যবহারে সতর্কতা

জীবাণুসার ব্যবহার করার সময় কিছু সর্তকতা বা সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরী। এগুলো হলো-

১) জীবাণুসার প্রয়োগ করার সময় অথবা প্রয়োগ করার আগে জমিতে জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে।

২) জীবাণুসার প্রয়োগ করার সময় অথবা আগে বা পরে ৫-৭ দিন এর মধ্যে কোন রাসায়নিক সার বা রোগ-পোকা-আগাছা নাশক প্রয়োগ করা চলবে না।

৩) জীবাণুসার সরাসরি রৌদ্রে বা খুব বেশী তাপমাত্রায় রাখা যাবে না, সব সময় অপেক্ষাকৃত শীতল স্থানে, ছায়াতে রাখতে হবে।

8) মেয়াদকালের মধ্যেই অর্থাৎ তৈরী হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে জীবাণুসার ব্যবহার করতে হবে।

৫) জীবাণু সার জমিতে প্রয়োগ করার সময় অথবা শোধন করা বীজ বা চারা রোপণ করার সময় জমির মাটিতে যেন পর্যাপ্ত ‘জো’ থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

৬) রাইজোবিয়াম জাতীয় জীবাণু সার ব্যবহারের সময় ফসল অনুযায়ী উপযুক্ত প্রজাতির রাইজোবিয়াম ব্যবহার করতে হবে।

৭) জৈব সার যেন উপযুক্ত গুণমানের হয় অর্থাৎ উপযুক্ত পরিমাণে সক্রিয় জীবাণু যেন থাকে, তা ব্যবহারের আগে সুনিশ্চিত করতে হবে।

৮) রাইজোবিয়াম ব্যবহারের সময় মাটির পি.এইচ বা ক্ষারাম্লমান ৬.০- ৭.৫ এবং অ্যাজোটোব্যাক্টর ব্যবহারের সময় ৬.৫ ৭.৫ থাকা উচিত। অন্যথায় জীবাণুর ক্রিয়া ব্যাহত হবে ও জীবাণুসারের কার্যকারিতা হ্রাস পাবে।

৯) প্রতিষ্ঠিত ও নামী সংস্থা থেকে জীবাণুসার সংগ্রহ করায় ঝুঁকি কম।

শস্য সুরক্ষায় উপকারী জীবাণুর ব্যবহার

বিভিন্ন ধরণের জীবাণু বা ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক বা ফাংগাস, ভাইরাস, অ্যাক্টিনোমাইসিটিস ফসলের নানা ধরণের রোগ-পোকা-আগাছাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সুনির্দিষ্ট সমস্যার সমাধানে উপযুক্ত জীবাণুর কালচার তথা বাণিজ্যিক উৎপাদন নিয়ম মেনে যথাসময়ে ব্যবহার করে রোগ-পোকা-আগাছাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় অতি সহজেই এবং পরিবেশের প্রায় কোন ক্ষতি না করেই।

সুসংহত ফসল সুরক্ষা ব্যবস্থার এক অতি প্রয়োজনীয় ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলো জীবাণুর মাধ্যমে শস্য সুরক্ষা বা ফসলের সুরক্ষা। অনিয়মিত, অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিমিতভাবে রাসায়নিক প্রয়োগ করার ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ফসলের সুরক্ষা ব্যবস্থাও আজ বিরাট বড় প্রশ্নচিহ্নের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই, আজ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে পরিচর্যা ও যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি জৈব ও জীবাণুর বিজ্ঞান সম্মত প্রয়োগ করার। ফসলের সমস্যা বুঝে সেই অনুযায়ী উপযুক্ত জীবাণুর প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেই শস্য সুরক্ষা করা সম্ভব।

জীবাণুজাত কীটনাশক

ক) ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত

১) ব্যাসিলাস থুরিন্জিয়েনসিস (Bacillus thuringiensis)

এটি একটি মাটিতে বসবাসকারী ব্যাক্টেরিয়া। এরা মানুষ, পশুপাখি ও পরিবেশের কোনরূপ ক্ষতিসাধন করে না। এখনও অবধি প্রায় ৬৭টি উপপ্রজাতি (sub-species) আবিষ্কৃত হয়েছে, তার মধ্যে কারস্টাকি (kurstaki) উপপ্রজাতিটি কৃষিক্ষেত্রে বেশী ব্যবহৃত হয়। এই ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে আমরা বিভিন্ন ধরণের পোকা, মূলতঃ ল্যাদাপোকা, মশা, বিটল্ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

এই ব্যাক্টেরিয়ার স্পোর ও বিষাক্ত সক্রিয় পদার্থ মিশিয়ে বাজারে বিভিন্ন নামে জৈব কীটনাশক পাওয়া যায়। এই জৈব কীটনাশক স্প্রে করে কপির হীরকপীঠ মথ, তুলোর বোল ওয়ার্ম, তামাকের ল্যাদাপোকা, ডালশস্য ও টমেটোর পাতাখেকো ও ফল ছিদ্রকারী পোকা, বাঁধাকপির পাতা ছিদ্রকারী পোকা, পাতা মোড়া পোকা, পাট ও তিলের শুঁয়োপোকা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ল্যাদার প্রথম অথবা দ্বিতীয় উপ দশায় স্প্রে করলে সব থেকে ভালো ফল পাওয়া যায়। সবসময় বিকেলের দিকে স্প্রে করা উচিত। পরিবেশের তাপমাত্রা ৩০° সেলসিয়াস এর বেশী হলে এর কার্যকারিতা হ্রাস পায়। জৈব কীটনাশক প্রয়োগের পর এই সমস্ত পোকা যখন ব্যাক্টেরিয়ার স্পোর ও অধিবিষ (endotoxin) খায়, তা পোকার সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে, পোকার পেটে বা পাকস্থলীতে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে, অস্ত্রের বেশী ক্ষারীয় স্থানে বিষাক্ত ডেলটা এন্ডোটক্সিন উৎপন্ন করে খাদ্যনালী ছিদ্র করে। ফলে পোকা খাওয়া বন্ধ করে দেয়, অসাড় হয় ও তারপর ধীরে ধীরে ১-৩ দিনের মধ্যে মারা যায়।

২) ব্যাসিলাস স্ফেরিকাস (Bacillus sphaericus)

মশা ও বিভিন্ন ধরণের ফলের মাছি ও অন্যান্য মাছি মারে।

খ) ছত্রাক ঘটিত

১) বিউভেরিয়া ব্যাসিয়ানা (Beauveria bassiana)

এটি একটি উপকারী ছত্রাক, যা ব্যবহার করে আমরা বিশেষতঃ চোষী ও ল্যাদা জাতীয় পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। ফসলের শত্রু ল্যাদাপোকা যদি খাদ্যের মাধ্যমে এই ছত্রাক নাও খেয়ে নেয় তবুও শুধুমাত্র সংস্পশেই এরা পোকার শরীরে বংশ বিস্তার করে এবং বিউভেরিসিন, ব্যাসিয়ানোসাইড ইত্যাদি বিষ তৈরী করে। ফলে, পোকা বিষক্রিয়া জনিত কারণে মারা পড়ে।

এই ছত্রাক ধানের মাজরা পোকা, পাতামোড়া পোকা, চীনাবাদামের সাদা গ্রাব, আখের পাইরিলা, নারকেলের গন্ডারে পোকা, ডালশস্য, টমেটো ও তুলোর ল্যাদা পোকা (Helicoverpa armigera), কপির হীরকপীঠ মথ (Plutella xylostella), তামাক ও সূর্যমুখীর পাতা ছিদ্রকারী পোকা (Spodoptera) ইত্যাদির বিরুদ্ধে ভালো কাজ দেয়। গাছ প্রতি ১-২ টি পোকা দেখা মাত্রই স্প্রে করা উচিৎ। এই ছত্রাক রেশম পোকার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর রোগ সৃষ্টি করে বলে রেশম চাষ এলাকায় এর ব্যবহারে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

২) ভার্টিসিলিয়াম লেকানী (Verticillium lecanii)

এটি একটি উপকারী ছত্রাক, যা মূলতঃ জাবপোকা, চিরুণীপোকা, বাদামী শোষকপোকা, সাদা মাছি ও চোষিপোকা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পোকার গায়ে যে ছিদ্র থাকে তা দিয়ে এরা সহজেই পোকার পেটে (অন্ত্রে) প্রবেশ করে সেখানে বাসা বাঁধে, ডিপিকোলিনিক অ্যাসিড জাতীয় বিষ তৈরি করে ও শত্রুপোকা নিয়ন্ত্রণ করে।

৩) মেটারহিজিয়াম্ অ্যানিসোপ্পি (Metarhizium anisopliae)

এটি একটি উপকারী ছত্রাক, যা মূলতঃ নারকেলের গন্ডারে পোকা (Oryctes rhinoceros), বাদামের কাটুই পোকা (Agrotis ipsilon), ধানের বাদামী শোষক পোকা (Nilaparvata lugens), কপির হীরকপীঠ মথ (Plutella xylostella) ও আখের কান্ড, পর্বমধ্য ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যান্য উপকারী ছত্রাকের মতই এরাও শত্রুপোকার গায়ের ছিদ্র দিয়ে ঢুকে যায় এবং বিষক্রিয়ায় মেরে ফেলে।

এছাড়া, এরা কিছু গৌণ বিষ যেমন, ডেসট্রাক্সিন (Destruxin), সাইক্লোডেপ্সিপেপ্টাইড্ Cyclodepsipeptide), ডেস্মিথাইল ডেস্ট্রাক্সিন (Desmethyl destruxin) ইত্যাদি নিঃসৃত করে।

৪) পেসিলোমাইসেস ফিউমোসোরোসিয়াস (Paecilomyces fumosoroseus)

লাল ও হলুদ মাকড় নিয়ন্ত্রণের জন্য এই ছত্রাক সুপারিশ করা হয়। সঠিক মাত্রার ওষুধ প্রথমে ২-৫ লিটার জলে ভালোভাবে গুলে নিয়ে দ্রবণটি একটি পাতলা মসলীন জাতীয় কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে স্প্রে ট্যাঙ্কে ঢেলে পরিমাণ মতো জল মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। গাছ প্রতি ২-৩ টি মাকড় দেখা দেওয়া মাত্রই ব্যবহার করা উচিত।

গ) ভাইরাস ঘটিত

১) এন. পি. ভি. (N. P. V.)

নিউক্লিয়ার পলিহেড্রোসিস ভাইরাস (Nuclear Polyhedrosis Virus) বা সংক্ষেপে এন. পি. ভি. (N. P. V.) স্প্রে করে মূলতঃ ল্যাদাপোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নির্দিষ্ট কীটশত্রুর জন্য নির্দিষ্ট এন. পি. ভি. প্রয়োগ করতে হবে।

এই ভাইরাস একবার স্প্রে করার পর যে যে ল্যাদাপোকা মারা যাবে অথবা যাদের পঙ্গুত্ব বা প্যারালাইসিস হবে, সেরকম ১০০টি পোকা সংগ্রহ করে থেঁতো করে বা শিলনোড়াতে বেটে তার যে নির্যাস বের হবে তা ৩০০ লিটার জলে গুলে এক একর জমিতে আবার স্প্রে করা যাবে। কারণ, ঐ মিশ্রণে আক্রান্ত ল্যাদার শরীরের ভাইরাস থাকে। ল্যাদার প্রথম ও দ্বিতীয় উপদশায় ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো কাজ হয়।

জীবাণুজাত রোগনাশক

১) ট্রাইকোডাবমা ভিরিডি (Trichoderma viride)

এটি একটি মাটিতে বসবাসকারী ছত্রাক। এরা মানুষের ও গাছের কোন ক্ষতি করে না। এরা অনেকটা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মত কাজ করে। অর্থাৎ এই ছত্রাক দিয়ে আমরা ক্ষতিকর ছত্রাক মারতে পারি। সাধারণতঃ মাটিতে বা গাছের শেকড়ে ব্যবহারের জন্য এটি সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া, এই ছত্রাক দিয়ে চারা এবং বীজশোধনও বেশ কার্যকরী।

এই উপকারী ছত্রাক দিয়ে বিভিন্ন অপকারী ছত্রাক জনিত উদ্ভিদের রোগ (মাটি ও বীজবাহিত রোগ) যেমন, বীজতলায় কপি বা সব্জির গোড়া পচা (Damping off) রোগ (রাইজোক্টোনিয়া, পিথিয়াম, ফাইটোপথোরা ইত্যাদি), পান, ওল ইত্যাদির গোড়ায় সবুজ ও সাদা রং সাগুদানা রোগ (ক্লেরোসিয়াম), কলার মোকো রোগ (ফিউজারিয়াম) ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

২) সিউডোমোনাস ফুরোসেন্স (Pseudomonas fluoroscens)

এটি একটি মাটিতে বসবাসকারী উপকারী ব্যাক্টেরিয়া, যা মানুষ, পশুপাখি ও গাছকে আক্রমণ করে না। এই ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে বীজতলা বা চারার গোড়া পচা বা শেকড় পচা রোগ (পিথিয়াম, ক্লেরোসিয়াম, রাইজোক্টোনিয়া, ফাইটোন্থোরা ইত্যাদি ছত্রাক), ব্যাক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ (র‍্যালস্টোনিয়া বা সিউডোমোনাস), ছত্রাক জনিত ঢলে পড়া রোগ (ফিউজারিয়াম) ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

এই ব্যাক্টেরিয়া সিডারোফোর (আয়রন চিলেটিং এজেন্ট) নামক এক পদার্থ তৈরী করে অপকারী ছত্রাকের খাওয়া কমিয়ে দিয়ে তাদেরকে নষ্ট করে। এরা বেশ কিছু বিষ যেমন পাইওভারডিন, পাইওচেলিন, সিউডোব্যাট্রিন ইত্যাদি তৈরী করে অন্যান্য ছত্রাককে মেরে ফেলে। এছাড়া, এই ব্যাক্টেরিয়া বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক তৈরী করে অন্যান্য শত্রু ছত্রাকের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়।

৩) ব্যাসিলাস সাবটিলিস (Bacillus subtilis)

এই প্রকার ব্যাক্টেরিয়ার এ-১৩ (A-13) স্ট্রেনটি খুবই কার্যকরী, যা শুধু উদ্ভিদের রোগই নিয়ন্ত্রণ করে না, গাছের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। চা-এর কালো পচা (Black rot) রোগ নিয়ন্ত্রণে এই ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

৪) অ্যাস্পারজিলাস নাইজাব (Aspergillus niger)

এই উপকারী ছত্রাকের এ. এন. ২৭ (AN-27) স্ট্রেনটি ফসলের মাটি ও বীজ বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।

৫) ট্রাইকোডারমা হারজিয়েনাম (Trichoderma harzianum)

কার্যকারিতা ও প্রয়োগ বিধি ট্রাইকোডারমা ভিরিডি’র মতো।

জীবাণুজাত আগাছানাশক

(১) ফাইটোপথোরা পামিভোরা (Phytophthora palmivora)

এটি একটি মাটিতে বসবাসকারী ছত্রাক, যা স্প্রে করে লেবু জাতীয় ফসলের আগাছা- মূলতঃ মিল্ক উইড্ ভাইন্ (Milk weed vine) নিয়ন্ত্রণ করা হয়। স্প্রে দ্রবণের প্রতি মিলিলিটারে ৬.৭ × ১০০ সংখ্যক স্পোর থাকে এবং ১.২ লিটার দ্রবণ ৪৫০ লিটার জলে গুলে এক একরে স্প্রে করলে এরা আগাছার শেকড় পচিয়ে (Root rot) তাদের নির্মূল করে। এই ছত্রাক বাণিজ্যিক ভাবে ডিভাইন নামে বাজারে পাওয়া যায়।

২) কলেটোট্রাইকাম্ গ্লিওস্পোরোয়েডেস্ উপপ্রজাতি অ্যাসিস্টনোমিন (Colletotrichum gloesporoides f.sp. aeschynomene)

এটি শুকনো গুঁড়ো আকারে পাওয়া যায় যার মধ্যে ১৫ শতাংশ স্পোর ও ৮৫ শতাংশ অন্যান্য উপাদান থাকে। এটি জলে মিশিয়ে স্প্রে করে ধান ও সয়াবীনের নর্দান জয়েন্ট ভেচ্ (Northern Joint Vetch) আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বাণিজ্যিক ভাবে এটি কল্পেগো নামে বাজারে পাওয়া যায়।

৩) কলেটোট্রাইকাম্ গ্লিওস্পোরোয়েডেস্ উপপ্রজাতি মালভি (Colletotrichum gloesporoides f. sp. malvae)

এটি একটি উপকারী ছত্রাক, যার প্রয়োগে গম, তিসি, মুসুর ও সরিষার “গোলপাতা ম্যালো” (Round-leaved mallow) আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বায়োমাল, ম্যালেট নামে বাজারে পাওয়া যায়।

জীবাণুজাত নিমাটোড বা মাটির কৃমিনাশক

পেসিলোমাইসেস লিলাসিনাস (Paecilomyces lilacinus) নামক ছত্রাক ফসলের শিকড় ফোলা কৃমি বা নিমাটোড নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ, বায়ো নিমাটন নামে বাজারে পাওয়া যায়।

জীবাণু ঘটিত কীটনাশক, রোগনাশক, আগাছানাশক ইত্যাদি প্রয়োগের পদ্ধতি ও সর্তকতা

জীবাণু ঘটিত কাঁটনাশক, রোগনাশক ও আগাছানাশক প্রয়োগ করার পদ্ধতি ঔষধ ভেদে, ফসল ভেদে, ফসলের অবস্থা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। সাধারণভাবে যে যে বিষয়গুলোর উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে সে গুলো হলো-

১) শস্য সুরক্ষার উপাদানটি মেয়াদকাল উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ব্যবহার করতে হবে।

২) বীজ শোধন, চারা শোধন ও জমির মাটি শোধণের ক্ষেত্রে জীবাণুর সংস্পর্শে যেন রাসায়নিক সার বা রোগ-পোকা-আগাছা নাশক না আসতে পারে তা দেখতে হবে।

৩) জমিতে পর্যাপ্ত জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে।

৪) বি.টি. প্রয়োগের ক্ষেত্রে পরিবেশের তাপমাত্রা যেন ৩০° সেলসিয়াস এর বেশী না হয়।

৫) এন. পি. ভি. প্রয়োগের সময় কেবলমাত্র নিদ্দিষ্ট পোকার (যে পোকা মারা হবে) এন. পি. ভি. ব্যবহার করতে হবে, অন্যথায় কোন কাজ পাওয়া যাবে না।

৬) বিকালে বা সন্ধ্যার সময় স্প্রে করতে হবে, প্রখর সূর্যালোকে স্প্রে করলে কার্যকরী হবে না।

৭) জীবাণুজাত রোগনাশক দ্বারা বীজশোধন, জমির মাটি শোধন বা চারা শোধন করার পদ্ধতি জীবাণুসার দ্বারা শোধনের মতোই।

৮) জীবাণুজাত রোগ-পোকা-আগাছা নাশক স্প্রে করার সময় বা ৫-৭ দিন আগে-পরে কোন রাসায়নিক স্প্রে করা যাবে না।

জীবাণু ঘটিত জৈব রোগ-পোকা-আগাছা নাশক প্রস্তুতও বিপণনকারী কয়েকটি সংস্থা

১) পেস্ট কন্ট্রোল ইন্ডিয়া ২৩, মির্জা গালিব স্ট্রিট, কোলকাতা- ১৬

২) বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল দত্ত হাউস, ৯৪, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, কোলকাতা- ১২

৩) কৃষি রসায়ন – ২৩৪/৩এ, এ.জে.সি. বোস রোড, কোলকাতা – ২০

৪) ই. আই, ডি প্যারী ৪, সিনাগগ স্ট্রিট, কোলকাতা- ১

৫) শ্রী সাই এগ্রি বায়ো ল্যাবস্ প্রাঃ লিঃ ৪-৪৮-১০/১, লসনস্ বে কলোনী, বিশাখাপত্তনম-১৭, অন্ধ্রপ্রদেশ

৬) টোটাল এগ্রিকেয়ার কনসার্ন প্রাঃ লিঃ ১২/এ, নেতাজী সুভাষ রোড, কোলকাতা-১

৭) ম্যাক্সিমা বায়োটেক প্রাঃ লিঃ ৫৪, জে.এম.সি. হাউস, আহমেদাবাদ-৬

৮) এলবাইটেক ইনোভেশনস্ লিঃ (Mtk. সোলাস ক্রপটেক) মাইলাপোর, চেন্নাই

৯) কর্ণাটক অ্যাগ্রো কেমিক্যালস্ পুনয়, বেঙ্গালেরু – ৫৮

১০) এক্সেল ইন্ডাসট্রিজ লিমিটেড ৭০৬, সেন্ট্রাল প্লাজা, ২/৬, শরৎ বসু রোড, কোলকাতা- ২০

১১) টি. স্টেনস্ প্রা: লি: (Mtk. ইন্দোফিল) রেসকোর্স রোড, চেন্নাই-৮

১২) মাল্টিপ্লেক্স বোয়োটেক প্রা: লি: ২এ, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, কোলকাতা ১৩

১৩) অমিত বায়োটেক প্রা: লি: ২১, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, কোলকাতা- ১৯

  • ১৪) আর পি সি এগ্রো ৩, পোর্তুগীজ চার্চ স্ট্রিট, কোলকাতা- ১

১৫) সুপার এগ্রো প্রা: লি: ২২বি, সৎচাষী পাড়া, কোলকাতা- ২

১৬) শীর এগ্রো বায়ো-ফার্টিলাইজার ক্রিয়েটিভ অর্গানাইজেশন-উত্তর দারুয়া, কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুব

১৭) লিবি এগ্রো প্রা: লি: ৩এ, ধর্মদাস রোড, কালিঘাট, কোলকাতা- ২৬

১৮) অজয় বায়োটেক প্রা: লি: ২৩৩ এ, জে.সি. রোড, কোলকাতা- ২০

১৯) পি. জে. মার্গো প্রা: লি: ক্রুকড লেন, কোলকাতা- ৬৯

২০) ইন্টারন্যাশনাল প্যানাশিয়া প্রা: লি: ৮/১, মিডলটন রো, কোলকাতা- ১

২১) পিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস লি: সেবক রোড, শিলিগুড়ি- ৭৩৪০০১

কৃষিক্ষেত্রে উপকারী জীবাণুর বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। ইতিমধ্যে বহু সরকারী, আধাসরকারী ও বেসরকারী সংস্থা নানা ধরণের বাণিজ্যিক উৎপাদন (Product) বিপণন করছেন এবং সেসব ব্যবহার করে বহু চাষী ভালো কাজ পাচ্ছেন। সাট্সা’র উদ্যোগে যে সব ‘জৈব গ্রাম’ কর্মসূচী চালু রয়েছে সেখানেও কৃষকরা বিভিন্ন ধরণের জীবাণু সার ও রোগ-পোকা নাশক ব্যবহার করছেন। কৃষির বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে গেলে জীবাণুর ব্যবহার বাড়াতেই হবে। মাটিতে জীবাণুর মজুদ ভাণ্ডার (Buffer stock) যত সমৃদ্ধ হবে কৃষি ততই টেকসই হবে, উৎপাদনশীলতা বাড়বে, উৎপাদন ব্যয় কমবে, কৃষি লাভজনক হবে এবং পরিবেশ হবে কলুষ মুক্ত।

জীবাণুসার উৎপাদন ও বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত কিছু সংস্থা

১) ডালশস্য ও তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র, রাণী বাগান, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ, ৭৪২১০২

২) নাইট্রোফিক্স ল্যাবরেটরি, ২৫ বাঁশদ্রোণী অ্যাভিনিউ, কলকাতা-৭০

৩) বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিঃ, ৯৪ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, কলকাতা- ১২

৪) বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজি, নীমপীঠ আশ্রম, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ৭৪৩৩৩৮

৫) টোটাল এগ্রি-কেয়ার কনসার্ন প্রাঃ লিঃ, ১২এ এন. এস. রোড, কলকাতা- ১

৬) লিবি এগ্রো কেম, প্রাঃ লিঃ, ৩এ ধর্মদাস রোড, কালিঘাট, কলকাতা- ২৬

৭) নডিউল রিসার্চ ল্যাবরেটরি, বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মোহনপুর, নদীয়া, ৭৪১ ২৫২

৮) পিক্ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস লিঃ, সেবক রোড, শিলিগুড়ি, ৭৩৪০০১

৯) কৃষক ভারতী কো-অপারেটিভ লিঃ, ব্লক এ, লেকটাউন, কলকাতা- ৮৯

১০) শীর এগ্রো বায়োফার্টিলাইজার ক্রিয়েটিভ অর্গানাইজেশন, উত্তর দারুয়া, কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর

১১) ব্রহ্মপুত্র ভ্যালি ফার্টিলাইজার কর্পোরেশান লিঃ, মিলনপল্লী, শিলিগুড়ি- ৭৩৪৪০৫

১২) শীলাবতী হর্টিকালচার ও অ্যাকোয়াকালচার, পি-২২১/১, স্ট্র্যান্ড ব্যাংক রোড, কল-১

১৩) ইস্টার্ন এন্টারপ্রাইজেস, ৪/৪ পোদ্দার নগর, কলকাতা-৬৮

১৪) লীলা এগ্রোটেক, রাজীবপুর, উত্তর ২৪ পরগণা – ৭৪৩৭০২

১৫) মাল্টিপ্লেক্স বায়ো-টেক প্রাঃ লিঃ, গঙ্গোত্রী বিল্ডিং, উল্টোডাঙ্গা, কলকাতা- ৫৪

১৬) আনসুল এগ্রো কেমিক্যাল, গঙ্গোত্রী বিল্ডিং, উল্টোডাঙ্গা, কলকাতা ৫৪

১৭) নব ভারত ফার্টিলাইজার লিঃ, গান্ধীঘর, নকশালবাড়ি, দার্জিলিং

১৮) মাইক্রো ব্যাক ইন্ডিয়া, ওগ রোড, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগণা – ৭৪৩১২৭

১৯) ইন্দোফিল কেমিক্যাল কোম্পানি, ৩৪ সার্কাস অ্যাভিনিউ, কলকাতা-১৭

২০) ইন্ডিয়ান ফার্মার্স ফার্টিলাইজার কোঅপারেটিভ (ইফকো), ৮ এ, জে.সি. বোস রোড, সার্কুলার কোর্ট, কলকাতা-১৭

Previous Part