এবার কয়েকটি বিশেষ বিশেষ ফৌজদারী অপরাধ ও আইন সংক্রান্ত দৃষ্টিকোন কে নিচে দেওয়া হল।
‘ফৌজদারী’ বা ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ এর ক্ষেত্রে প্রধান দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষের।
প্রধানত ফৌজদারী অপরাধ এর সংজ্ঞা ভারতীয় দণ্ডবিধি বা “ইন্ডিয়ান পেনাল কোড” অনুযায়ী বিবেচনা ও তার শাস্তিগুলি বর্নিত আছে।
সাধারণত ফৌজদারী অপরাধ কার্যপরিচালনা বিধি বা ইংরেজিতে যাকে বলে “Criminal Proedre Code” এ ব্যাপারে মানে ঘটনাগুলির সিদ্ধান্ত বা অনুসিদ্ধান্ত গুলি নিয়ন্ত্রন করে।
ফৌজদারী অপরাধ কার্যবিধি প্রমানের দায়িত্ব কিন্তু মূলতঃ অভিযোগকারীর। সামাজিক মূলস্রোত এর পরিপন্থি অপরাধ গুলির ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযোগকারীর ভূমিকা নেয়, তদনুসারে প্রমান এর ভার ঐ কর্তৃপক্ষের হাতে।
নীচে কয়েকটি অপরাধ এর আইনী দৃষ্টি কোন অনুলিখিত করা হল।
খারাপ কাজ বা কু-কর্মে সাহায্য- ১০৭নং ধারা
যদি কোন লোক (প্রাপ্ত বয়স্ক) অপর কাহাকে ও
কু-কর্মে উৎসাহ
কু-কর্মে সাহায্য
কু-কর্মে সাক্ষ্য
কু- কর্মের পরিকল্পনা
কু- কর্মে প্ররোচনা
কু-কর্মে পরোক্ষ উৎসাহ
কু- কর্মে সাক্ষ্য দেবার প্ররোচনা
কোনভাবে দান করে তবে তার অপরাধ হয়েছে ঐ মর্মে ” ভারতীয় দণ্ডবিধি” তাকে শাস্তি প্রদান করতে পারে।
‘ক’ বাবু একজন দোকানদার অর্থের বিনিময়ে ‘খ’ রাবু তাকে বীরভূমের এক দোকানদার এর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করাল।
‘ক’ ও ‘খ’ বাবু উভয়-ই কুকর্মের জন্য শাস্তি যোগ্য। তদুপরি ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী অন্যান্য শাস্তি যোগ্যতা আহ্বান করে।
বলপ্রয়োগ ১১৫নং ধারা:
যে কোন খারাপ কাজ করার জন্য অথবা
খারাপ কাজে অংশীদার হওয়া।
খারাপ কাজে সহ অংশীদার হওয়া।
খারাপ কাজ করা।
প্রভৃতি-র জন্য কোনরূপ বল প্রয়োগ শাস্তিগ্রাহ্য। যাকে আইনি ভাষায় বলে “অ্যাপ্লিকেশন অব ফোর্স বা ক্রিমিনাল ফোর্স”
আত্মহত্যার হুমকি ও প্ররোচনা ৩০৬নং ধারা
কোন ধরনের প্ররোচনা বা উস্কানীমূলক কথাবার্তা যা আত্মহত্যার জন্য যথেষ্ট বিবেচিত হয় সেই রুপ কথাবার্তা বা প্ররোচনাকারী আইনী সিদ্ধান্ত মতে অপরাধী।
এ ক্ষেত্রে সশ্রম কারাদণ্ড যা ১০ বৎসর কাল পর্যন্ত হতে পারে।
প্রতারনা ৪২০ নং ধারা
সম্পূর্ন অসত্য মাধ্যমকে ভিত্তি করে, অথবা মিথ্যা কথার সাহায্যে কারো সঙ্গে কোন রুপ লেদদেন যা অর্থ সংক্রান্ত হতে পারে অথবা ঐ কাজের ফলে কারও কোনরুপ সম্পত্তি গত/আর্থিক/শারীরিক / মানসিক ক্ষতি-র কারণ হয় অথবা
ঐ কাজের পরিনাম এ কেউ অন্যায়ভাবে কাউকে ও ঐ মিথ্যা উদ্যেশ্য সফল করার জন্য আটক রাখে পরিনামে তার ঐ পূর্ববর্নিত কার্যাবলীগুলি হয় তবে তাকে প্রতারনার মাধ্যমে ঐ সংগঠিত হয়েছে বলে প্রতারনার দৃষ্টি ভঙ্গিতে ঐ অপরাধ পূর্বাপর অপরাধ গুলি সঙ্গে বিবেচিত হয়।
কারাদন্ড ও অর্থদন্ড উভয় একই সাথে গ্রাহ্য।
অসাবধানতা-র জন্য ক্ষতি ২৬৯ নং ধারা
ইচ্ছাকৃত অসাবধানতা যা কোন কাজের জন্য স্বাভাবিকভাবে সাবধান হওয়া উচিত ও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক সে ক্ষেত্রে ঐ ইচ্ছাকৃত অসাবধানতা-র কারনে কোনরুপ ক্ষতি যা আর্থিক / শারীরিক / মানসিক/ সামাজিক / পারিবারিক / সম্পত্তিগত ত্রুটির সার্বিক ভাবে / জনস্বার্থহানীর কারণ হবে।
এটি অপরাধ বিবেচিত হবে ও ভাবততীয় দন্ডবিধির ২৬৮ নং বিধান অনুযায়ী কারাদন্ড ও অর্থদন্ড গ্রাহ্য।
বিদ্বেষ মূলক কাজ
“ম্যালিস” বা বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে কোনরুপ কার্যকলাপ যার ফলে / প্রতিক্রিয়ায় যাবতীয় ক্ষতির কারণ এককভাবে অথবা যৌথভাবে হতে পারে/ ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনা আছে তবে তা দন্ডগ্রাহ্য।
কারাদন্ড বা অর্থদন্ড উভয়-ই স্বীকৃত। খুব সোজা বাংলায় যাকে বলে হিংসা বা “জেলাসী”-র দ্বারা কৃত কোন কাজ।
বাজে বা অসত্য সংবাদ পরিবেশন
উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিতভাবে অসত্য সংবাদ পরিবেশন কেবল কোনরুপ ষড়যন্ত্রের প্রাথমিক পদক্ষেপ।
ইচ্ছাকৃতভাবে অসত্য সংবাদ পরিবেশন কেবল অপরাধ সংগঠিত করার মানসিক গতিবিধি প্রমান করে।
সে ক্ষেত্রে কৃত / অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অপরাধ প্রমান হলে শাস্তি স্বরূপ মাসাধিক কাল কারাদন্ড বা অর্থদন্ড উভয় একই সাথে / হতে পারে।
অপহরণ – ৩৫৯/৩৬২/৩৬৩ নং ধারা
আইনিভাবে অপহরণ দুধরনের। (১) কিডন্যাপিং, (২) অ্যাবডাকশন
(১) কিডন্যাপিং – বিনা অনুমতিতে (যে ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন) ভারতের বাইরে কেউ কাউকে নিয়ে গেলে তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে বলা হয়- এটি ভারতীয় দন্ডবিধি বলে থাকে।
অ-প্রাপ্ত বয়স্ক-র যা সংজ্ঞা দেওয়া আছে তাতে যদি কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ককে অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে নিয়ে গেলে তাও অপহরণ বলা হবে।
মূল বিষয়টা হচ্ছে “অনুমতি’
(২) অ্যবডাকশন- বল প্রয়োগের মাধ্যমে যদি / জোরপূর্বক / প্রতারনা পূর্বক অপহরণ করে তা ” অ্যবডাকশন” এর দৃষ্টিকোন থেকে বিচার হবে।
সে ক্ষেত্রে অনুমতি-র সঙ্গে প্রাধান্য পাবে বল প্রয়োগের বিষয়টি।
চুরি-৩৭৯/৩৮০/৩৮১/৩৮২ নং ধারা
“অনুমোদন ব্যতিরকে অসৎ উদেশ্যে অস্থাবর সম্পত্তির স্থান পরিবর্তন কে ভারতীয় দন্ডবিধি চুরি বলেছেন।
বিষয়টা কে সহজ করা যাক।
ধরুন, ‘ক’ বাবু একজন ব্যবসায়ী, অফিস আছে ডালহৌসী পাড়ায়।
অফিসে দেখা করতে গিয়ে আপনি ‘ক’ বাবুর টেবিলের উপর পেনটি কোন প্রয়োজন ব্যবহার করতে গিয়ে পরে অ-সাবধানতা বশত পেনটি চেয়ার এর উপর রাখলেন।
অভিযোগকারী যদি ‘ক’ বাবু হন, এবং অভিযোগটা যদি কলম চুরি হয় তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনার বিরুদ্ধে চুরির দায়ের অভিযোগ গ্রহণ করতে পারেন।
মূল বিষয়টা হচ্ছে অনুমতি বিহিতভাবে দ্রব্য অপসারণ।
আর একটা কথা হচ্ছে, চুরি বা ঐ জাতীয় উদ্যেশ্য কে বাস্তবায়িত করার জন্য যদি কোন অস্ত্র তা যে প্রকারই হোক পাওয়া গেলে বা তার ব্যবহার করা হলে বিধান অন্যরূপ।
চুরি করার সঙ্গে যদি খুন বা কোনরূপ আঘাত বা নারী-র শ্লীলতাহানী বা সতীত্ব হনন এর চেষ্টা বা কার্যকারণ ঘটে তবে,
‘ দন্ডবিধির বিধানে চুরির অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির দন্ড ও ভোগ করতে হবে।
পীড়নমূলক আদায়- ৩৮৩নং ধারা
বল প্রয়োগ অথবা তদরূপ ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে কোন রূপ কার্যকলাপ সংগঠিত করে যাতে ভীত ব্যক্তি ঐ ভীতিকর অবস্থা-র চাপে বলপ্রয়োগ বাঞ্ছিত কার্যে সম্মতি দেয় যাতে তার কোন সম্পত্তি অথবা কোন সই সাবুদ এর মাধ্যমে তার কোন “মূল্যবান নিরাপত্তা” (ভ্যাল্যুএক্স সিকিউরিটি) উক্ত ভীতি প্রয়োগকারীকে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়।
ধরুন ‘ক’ বাবু ‘খ’ বাবুকে ভয় দেখিয়ে বললেন যে তিনি উক্ত ‘খ’ বাবুকে মানহানীর মামলায় ফেলবেন যদি না ‘ক’ বাবুকে ‘খ’ বাবু তার খড়িবাড়ির জমি লিখে না দেন।