তৃতীয় অধ্যায় তুর্কি বিজয় ও তার সামাজিক সংস্কৃতির পরিণাম

filter: 0; fileterIntensity: 0.0; filterMask: 0; algolist: 0; multi-frame: 1; brp_mask:0; brp_del_th:null; brp_del_sen:null; delta:null; module: photo;hw-remosaic: false;touch: (-1.0, -1.0);sceneMode: 8;cct_value: 0;AI_Scene: (-1, -1);aec_lux: 0.0;aec_lux_index: 0;albedo: ;confidence: ;motionLevel: -1;weatherinfo: null;temperature: 36;

১. সাধারণ আলোচনা

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাগীতি। খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এর রচনাকাল। চর্যার পর প্রায় আড়াইশো বছরকাল বাংলা সাহিত্যের কোনো ভূমিকা নিদর্শন পাওয়া যায়নি। দ্বাদশ শতকের শেষার্ধ থেকে চতুর্দশ শতকের প্রথমভাগ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্য নিষ্ফলা ছিল। তাই সাহিত্যের ঐতিহাসিকগণ এই সময়টাকে বাংলা সাহিত্যের ‘অন্ধকার যুগ’ নামে অভিহিত করেছেন। এই সময়ে কোনো শক্তিশালী প্রতিভা থাকতে পারেন, তুর্কি-আক্রমণে তাদের লেখনী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। কোনো উৎকৃষ্ট গ্রন্থাদি রচিত হয়ে থাকলেও তা তুর্কি-আক্রমণে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে তুর্কি সেনাপতি বখতিয়ার খিলজি বিহার ও বাংলাদেশ বিজয়ের জন্য অভিযান শুরু করেন, এবং ত্রয়োদশ শতকের একেবারে প্রথমে (১২০১ খ্রিস্টাব্দে) বাংলাদেশের সেনবংশীয় রাজা লক্ষ্মণসেনকে পরাজিত করে বাংলাদেশে মুসলমান নুতন রাজশক্তি শাসনের ভিত্তি স্থাপন করেন। বখতিয়ার খিলজি তাতারদেশীয় অশ্ববিক্রেতার ছদ্মবেশে মাত্র সতেরোজন অনুচরকে নিয়ে নবদ্বীপে লক্ষ্মণসেনের রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে অতর্কিত আক্রমণে লক্ষ্মণসেনকে বিপর্যস্ত করেন। লক্ষ্মণসেন কোনোরূপে আত্মরক্ষা করে নৌকাযোগে পূর্ববঙ্গে পালিয়ে যান। নদিয়ায় লুণ্ঠনকার্য সমাপ্ত করে বখতিয়ার অতঃপর বাংলার প্রাচীন ও ঐতিহাসিক রাজধানী গৌড় বিনা প্রতিরোধে দখল করেন। অল্পকাল মধ্যেই তিনি বরেন্দ্রভূমি জয় করে দেবকোটে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন।

১২০৩-০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বখতিয়ার বাংলার অধিকৃত অঞ্চলে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়াসী হন। মুসলিম বিজেতাদের রীতিনীতি ও লক্ষ্য ছিল বলপূর্বক অপরকে ধর্মান্তরিত করা-অপরের সংস্কৃতি বিধ্বস্ত করা। সাহসী, যুদ্ধবাজ ও ধর্মোন্মাদ তুর্কি জাতির গোঁড়া সংস্কার

ছিল-কাফের অর্থাৎ বিধর্মী হিন্দুদের পরাস্ত করা পুণ্যব্রত। তাই তারা হিন্দু দেবদেবীর মঠ, মন্দির ও শিক্ষায়তন-চতুষ্পাঠী ও বিহার এবং দেবমূর্তি

অত্যাচার ও ধর্মান্তরীকরণ

প্রভৃতি ধ্বংস করে মসজিদ ও মুসলিম শিক্ষায়তন প্রতিষ্ঠা করেন। নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, হত্যা, গৃহদাহ, লুঠ প্রভৃতির মাধ্যমে তুর্কিরা ভয়াবহ তুর্কিনাচন শুরু করে। প্রাণভয়ে সন্ত্রস্ত অনেকে দেশ ছেড়ে পুঁথিপত্র নিয়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়। অনেকে বাঁচবার জন্য বাধ্য হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এ সময় পীর-ফকিরেরা ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠেন। বহু বৌদ্ধভিক্ষুককে বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করা হয়।

বখতিয়ার খিলজি অসুস্থ অবস্থায় ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে এক বিশ্বাসঘাতক ওমরাহের দ্বারা নিহত হন। এরপর মুসলমান সেনাপতি ও তাদের অনুচরবর্গের মধ্যে সিংহাসন লাভের জন্য সাংঘাতিকভাবে ষড়যন্ত্র, গুপ্তহত্যা, রক্তাক্ত যুদ্ধ ও হত্যাকান্ড চলতে থাকে। রাজশক্তির এই

ঘন ঘন উত্থান, পতন ও রাষ্ট্রিক ভাঙাগড়ার প্রভাবে সমাজজীবনে তুমুল অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টি হয়। গৌড়বঙ্গ বিজেতাদের আমলে গৃহবিবাদ, ষড়যন্ত্র, পদচ্যুতি ও হত্যা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিকদের মতে এই সময়ের বাংলাদেশ হয়ে ওঠে যেন একটা ‘বিবাদপুরী’- নিত্যকলহে সর্বদা ঘূর্ণিত বিঘূর্ণিত ও রস্তাপ্লুত।

দেশব্যাপী ঘোর অরাজকতা ও দুর্দিনে মানুষের জীবন যখন নানাদিক থেকে বিপন্ন ও অনিশ্চিত-যখন প্রাণ বাঁচাবার জন্য মানুষের চেষ্টাই প্রধান-তখন সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা একেবারেই অসম্ভব। জীবনের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হলে মানুষ কোনো সৃষ্টির কথা ভাবতে পারে না। তুর্কি আক্রমণের জন্য দুই শতাব্দীর অধিককাল কোনো সাহিত্যিক নিদর্শন পাওয়া যায়নি। বাংলা সাহিত্য তাই মরুগ্রস্ত হয়েছে প্রায় আড়াইশো বছর। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতাব্দী এক নিবিড় অন্ধকার যুগ।

তুর্কি আক্রমণের ফলে বাংলা সাহিত্য বিকাশের পথে বিরাট অন্তরায় দেখা দিলেও-বাংলা সাহিত্যের গতিপথ চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যায়নি। চতুর্দশ শতাব্দীর শেষার্ধে এই অন্ধকার যুগের অবসান ঘটে। এই সময়ে ইলিয়াস শাহী রাজবংশের অভ্যুত্থান ঘটিয়ে (১৩৪২ খ্রিস্টাব্দ) সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলাদেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে শান্তি ও সুস্থিরতা অনেকটা ফিরে এলে পুনরায় সাহিত্য রচনার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এই রাজবংশ নানাভাবে বাংলা সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করে। ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন হুসেন শাহ। বস্তুত তাঁর সময় থেকে বাংলাদেশে পরিপূর্ণভাবে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ছিলেন সংস্কৃতি-অনুরাগী নৃপতি। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সাহিত্যের নব নব শাখার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটতে থাকে।

তুর্কি আক্রমণোত্তর ভাঙাচোরা বাঙালি জীবনের ক্ষয়িষ্ণু অস্তিত্বের কাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে প্রথম ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য। সাহিত্যের ইতিহাসে এই কাব্য মরুভূমির মধ্যে ওয়েসিস বা মরূদ্যানের মতো জেগে উঠেছে। অতঃপর বৈয়ব সাহিত্য, মঙ্গলকাব্য ও অনুবাদ সাহিত্যের বিপুল সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যকে ষোলকলায় পরিপূর্ণ করে তুলেছে। বাংলা সাহিত্যের

মধ্যযুগ হচ্ছে সমৃদ্ধির যুগ-মূলত নবপ্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসনকে কেন্দ্র করেই বাংলা সাহিত্যের এই ক্রমবিকাশ ঘটেছিল।

২. তুর্কি বিজয়ের ফলশ্রুতি: সামাজিক সংস্কৃতির পরিণাম

তুর্কি আক্রমণের প্রচণ্ড আঘাতে বাঙালির জীবন নানাদিকে বিপন্ন ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

ভূমিকা

হোসেন শাহের রাজত্বকালে ধীরে ধীরে সমাজজীবনে শান্তি ফিরে আসে।

জাতীয় জীবনে এই শাসনের সুফল ফলতে থাকে।

সেন রাজবংশের সময়ে দেশে কৌলিন্য প্রথা, বর্ণভেদ ও জাতিভেদ খুব কঠোর ছিল।

স্পৃশ্য, অস্পৃশ্য ও প্রায়শ্চিত্ত প্রভৃতি সংস্কার সেনযুগেই ব্যাপকভাবে সামাজিক ভেদাভেদ প্রচলিত হয়। বাঙালি সমাজে বড়ো রকমের শ্রেণিভেদ থাকায় তথাকথিত উচ্চবর্ণীয় অভিজাতেরা সংস্কৃত ভাষা, সাহিত্য ও শাস্ত্রাদি চর্চার একমাত্র অধিকারী থাকতেন। সমাজের তথাকথিত নিম্নশ্রেণিদের সঙ্গে তাঁদের কোনো হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল না।

শ্রমজীবী ও কৃষিজীবী শ্রেণির মানুষেরা কায়িক শ্রমের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করত। নিম্নশ্রেণির ব্যক্তিদের ধর্মকর্ম, আচার অনুষ্ঠান, পুজো পদ্ধতি ও সংস্কৃতিতে উচ্চবর্ণের লোকের সম্পর্ক স্থাপন তো দূরের কথা-তাদের নিতান্ত অবজ্ঞা ও অবহেলার চোখে এরা দেখত। নিম্নবর্ণের হিন্দুগণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির জন্য দলে দলে স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। মুসলমান পীর, গাজি ও আউলিয়াগণ বাংলার গ্রামে গ্রামে বিধ্বস্ত হিন্দু মন্দির ও মঠের সন্নিকটে ‘দরগাহ’ স্থাপন করে নিরক্ষর ও দরিদ্র হিন্দুদের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হন। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে এলেও উচ্চবর্ণের ঘৃণা

জাতি সমন্বয় ও অবজ্ঞা থেকে মুক্ত হবার জন্য নিম্নবর্ণীয় হিন্দুরা দলে দলে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করতে থাকলে সমাজপতিদের চৈতন্যোদয় ঘটল। হিন্দুজাতি, হিন্দুধর্ম ও সংস্কৃতিকে ইসলামের আগ্রাসী কবলের অবনতি থেকে রক্ষা করার জন্য একমাত্র প্রয়োজন উভয়শ্রেণির হৃদয়বন্ধন, উভয়ের মধ্যে নিবিড় ঐক্য প্রতিষ্ঠা। তাই বাধ্য হয়ে অভিজাতরা নিম্নশ্রেণিদের সঙ্গে মিলিত হবার জন্য সব বিভেদ-বিচ্ছেদ অবজ্ঞাকে বিসর্জন দিয়ে এগিয়ে গেলেন। রাষ্ট্রিক ঘূর্ণিঝড়ে আলোড়িত বাঙালি জাতি আর্য-অনার্য, উচ্চ-নীচ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে একত্র মিলিত হয়ে এক অখন্ড বাঙালি জাতি হিসাবে গড়ে উঠার সুযোগ পেল। ইসলাম ধর্মের প্লাবনকে ঠেকাতে গিয়ে উচ্চবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায় সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। সমাজের সর্বস্তরে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি ও শাস্ত্রের শিক্ষাদীক্ষা পরিব্যাপ্ত করে দিতে বদ্ধপরিকর হন। হিন্দু সংস্কৃতির বড়ো আশ্রয় রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত ইত্যাদি গ্রন্থ। এগুলিকে বাংলায় অনুবাদ করে জনসাধারণের হাঁতে তুলে দিতে প্রয়াসী হলেন। যে শাস্ত্রাদি কেবলমাত্র উচ্চবর্ণের অধিকারে ছিল তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হল।

উচ্চবর্ণের ধর্ম ও দেবতাকে যেমন নিম্নশ্রেণিয়দের আরাধনা ও চর্চার জন্য রুদ্ধদ্বার ভেঙে দেওয়া হল- তেমনি নিম্নবর্ণীয়দের আরাধ্য দেরদেবীকেও গ্রহণ করার প্রবণতা দেখা দিল উচ্চশ্রেণির মধ্যে। তখন উভয় সম্প্রদায় সমস্ত কৃত্রিম ব্যবধান ঘুচিয়ে পরস্পর পরস্পরের কাছাকাছি এসে মিলিত হবার জন্য আগ্রহী হল। শিক্ষিত সংস্কৃতিঅভিমানী

সংস্কৃতি বিনিময় অভিজাতরা লৌকিক দেবদেবী, ধর্মবিশ্বাস এবং লোক সাধারণের ধর্ম আচার অনুষ্ঠান ও’ পূজাপার্বণ গ্রহণ করলেন, অন্যদিকে তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষেরা ব্রাহ্মণ্য ধর্ম, পৌরাণিক দেবদেবী ও সংস্কৃতিকে নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করার সুযোগ পেল। এভাবে জাতি সমন্বয়ের বিরাট এক ক্ষেত্র রচিত হল।

বাংলা মঙ্গলকাব্যে তুর্কি আক্রমণের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে। মঙ্গলকাব্যগুলিতে দেখা যায় অন্-আর্য দেবতা চণ্ডী, মনসা ও ধর্মঠাকুর প্রভৃতি আর্য দেবদেবীর পাশে স্থান করে নিয়েছেন। এবং ধীরে ধীরে তাঁরা পৌরাণিক দেবতার সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে গেছেন। আদিতে চণ্ডী ছিলেন অনার্য ব্যাধজাতির পূজিতা দেবী, কিন্তু ক্রমে তিনি শিবজায়া উমার সঙ্গে এক হয়ে গেলেন। সাপের দেবী মনসা আর অস্ট্রিক দেবী না থেকে শিবের কন্যারূপে পরিচিত হলেন। আর্য দেবতা বিন্ধুর সঙ্গে এক হয়ে গেলেন অনার্য দেবতা ধর্মঠাকুর। লৌকিক দেবদেবী উচ্চবর্ণ হিন্দুদের কাছে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মানের আসন পেল। দুই স্তরের মানুষের মধ্যে হৃদয়ের নিবিড় সম্পর্ক গঠন ও ভাবমূলক সংহতি স্থাপনের পরিণাম হিসাবে মঙ্গলকাব্যের বিচিত্র কাহিনি রচিত হয় এবং অনুবাদ সাহিত্যেরও ব্যাপক আয়োজন চলে। বা. সা. ই. পরিচয়-৩

তুর্কি আক্রমণের ফলে দুই স্বতন্ত্র সভ্যতা পরস্পরের সংস্পর্শে এসে পরস্পরকে প্রভাবিত করে। মুসলিম পরিবারে হিন্দুর অনেক সামাজিক প্রথা আচার-অনুষ্ঠান প্রবেশ করে। হিন্দু-মুসলিম মুসলমান পরিবারে বাঙালির পান-সুপারি খাওয়ার প্রচলন হয়। হিন্দুদের মধ্যেও মুসলমান সমাজের কোনো কোনো আদবকায়দা প্রবেশ করে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও প্রীতির মনোভাব থেকেই উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সত্যপীরের পুজোর প্রচলন শুরু হয়। হিন্দু ও মুসলমান পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে।

হিন্দু ও মুসলমান এই উভয় সম্প্রদায়ের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও প্রীতির মনোভাব থেকেই মুসলিম রাজদরবারে সংস্কৃত সাহিত্যের সমাদর বৃদ্ধি পায় এবং অনেক বাঙালি হিন্দু হুসেন শাহ রাজদরবারে উচ্চ সরকারি পদ লাভ করেন। হুসেন শাহের প্রধান সেনাপতি ছিলেন গৌড় মল্লিক। তাছাড়া পুরন্দর খাঁ, সনাতন ও রূপ প্রভৃতি হিন্দু কর্মচারিগণ ওই আমলে যথেষ্ট প্রতিপত্তি অর্জন করেন। বিদ্যোৎসাহিতা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি-প্রীতি এবং ধর্মসহিষ্ণুতার জন্য পাঠান সুলতান হুসেন শাহকে ‘বাংলার আকবর’, ‘কৃষ্ণের অবতার’, ‘জগৎভূষণ’, ‘নৃপতিতিলক’ প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল। হুসেন শাহের আমলে বাংলাদেশে বৈঘ্নবধর্মের প্রচার শুরু হয়। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায়

বাংলাদেশে মহাভারত, ভাগবত প্রভৃতি বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়। হুসেন শাহের পুত্র

নসরৎ শাহ ও তাঁর সেনাপতি পরাগল খাঁ হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে প্রীতির পথ প্রশস্ত

করেন। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় হুসেন শাহী বংশের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করে।

হিন্দু ও মুসলিম সমন্বয়ের ফলে দেখা যায় মুসলমান ধর্মস্থানগুলির নির্মাণে বাংলার

শিল্প সমন্বয় পুরাতন স্থাপত্যরীতি গ্রহণ করা হয়েছিল, অন্যদিকে হিন্দুমন্দির নির্মাণেও ইসলামীয় স্থাপত্যের প্রভাব লক্ষ করা যায়। বাংলায় তুর্কি আক্রমণ জাতি সমন্বয়ের ফলে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশ সাধিত হয়।

১। তুর্কি আক্রমণের ফলে বাংলার সামাজিক জীবনের কী পরিবর্তন ঘটে-আলোচনা করো। অথবা, তুর্কি আক্রমণ বাঙালি সমাজের জীর্ণ দেহে অস্ত্রোপচারের মতো-আলোচনা করো।

২। তুর্কি আক্রমণের অন্যতম ফলশ্রুতি বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনের রূপান্তর সাধন-এ সম্পর্কে তোমার

মতামত লিপিবন্ধ করো।

৩। টাকা লেখো: বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ।

(উ. মা. ১৯৮৮)

৪। তুর্কি বিজয় বাঙালির সমাজ ও সাহিত্যে কী প্রভাব ফেলেছিল আলোচনা করো।

(উ. মা. ১৯৯০)

৫। তুর্কি বিজয় বাঙালির জীবনে ও সাহিত্যে কী কী প্রভাব বিস্তার করেছিল?

(উ. মা. ১৯৯৭)