ভারতে বসবাসকারী মুসলিমগণ, হিন্দুদের অনুরূপ, ব্যবহারিক মতানুযায়ী মুসলিম আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
যদিও অপরাধ সংক্রান্ত যাবতীয় মতগুলি এখনও ভারতীয় দণ্ডবিধি ও ফৌজদারী কার্যবিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
ফৌজদারী কার্যবিধির ১২৫ ধারা অনুযায়ী “খোরপোষ” (Alimony/ Maintainance) একইভাবে হিন্দু মুসলিম উভয় এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল।
১৯৮৫ ঐতিহাসিক “শাহবানু” মামলা অনুযায়ী Muslim Marriage and Di- vorce Act 1986 দ্বারা “খোরপোষ’ সক্রান্ত বিষয়াদি উপরোক্ত আইনানুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হবার ঐচ্ছিকতা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রদায়টি দুটি ভাগে বিভক্ত। সিয়া, সুন্নী। ধর্মের উৎসমূলে মত পার্থক্য এই বিভাজনের কারণ। একমাত্র বিবাহ ক্ষেত্রে স্বামী, স্ত্রী, ভিন্নমত সমর্থনের স্বীকৃত ছাড়া অপর কোন ধর্মাচারনের / প্রথা সম্পাদনের ক্ষেত্রে কোন নিষেধ নাই।
মুসলিম বিবাহ আইন
মুসলিম বিবাহ আইনকে চুক্তি বলে বিবেচনা করা হয়। আর এই মুসলিম আইনে ১৫ বছরের বালিকাকেই বিবাহযোগ্য সাবালিকা রূপে গণ্য করা হয়। মুসলিম আইনে যেকোন সুস্থ, সাবালক ব্যক্তি বিবাহ চুক্তি সম্পাদন করতে পারে। নাবালক, পাগল তাদের পক্ষে নিজস্ব অভিভাবকেরাও এই বিবাহ চুক্তি করতে পারে।
ভারতীয় সাবালক আইন কিন্তু মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ, স্ত্রীধন ও দত্তক গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য নয়। সেখানে ১৫বছর হলেই তাকে সাবালক/সাবালিকা বলে গন্য করা হয়।
মুসলমানদের বৈধ বিবাহের ক্ষেত্রে বিবাহ সভায় সম্পূর্ণ সুস্থ প্রকৃতির প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ অথবা একপক্ষের একজন পুরুষ অথবা মহিলার উপস্থিতি প্রস্তাব দেওয়াও নেওয়াপদ্ধতি চলতে পারে। তবে ঐ সময় সাক্ষী থাকা প্রয়োজন। যদি সাক্ষী না থাকে তবে ঐ বিবাহ রীতি বিরুদ্ধ বলে বাতিল হতে পারে। তবে সিয়া সম্প্রদায়ের বিবাহে চুক্তিতে সাক্ষী না থাকা রীতি বিরুদ্ধ নয়।
একজন মুসলমান পুরুষ ইচ্ছে করলে চারজন বৈধ স্ত্রী রাখতে পারেন। কিন্তু পঞ্চম ইলে মুসলিম আইন সিদ্ধ নয়। তবে একজন মুসলিম নারী কিন্তু অধিক স্বামী রাখতে পারেন না। মুসলিম আইনে সেটা আইনবিরুদ্ধ।
যদি কোন মুসলমান নারী ইদ্দ পর্ব শেষ হবার আগে বিবাহ করে এবং সন্তানদি হয় তবে সেই বিবাহ সিদ্ধ এবং সেই সন্তানও গ্রহণযোগ্য।
মুসলমান আইনে কোন মুসলিম মহিলা কোন মুসলমান পুরুষ ছাড়া বৈধ বিবাহের চুক্তি করতে পারবে না।
কোন মুসলমান নারী যদি মুসলমান ছাড়া অন্য কোন ধর্মের পূরুষকে বিবাহ করে মুসলিম আইনে তা রীতিবিরুদ্ধ হলেও বাতিলযোগ্য নয়।
তবে সিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিম আইনে কোন মুসলিম মহিলা ভিন্ন ধর্মের কোন পুরুষ বিবাহ করলে সে বিবাহ আইনসিদ্ধ নয় বলে বাতিলযোগ্য। মুসলিম আইনে ভিন্ন ধর্মে বিবাহকারীদের সন্তান সন্ততিরা বৈধ বলে স্বীকৃতি পেলেও তাদরে পিতা-মাতারা তাদের পিতা-মাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার পাবে না।
মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন-২নং ধারাঃ ১৯৮৬ খিস্ট্রাব্দে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ বিষয়ে লোক সভায় যে বিল পাশ হয়েছে, তাতে যে সব মুসলমান নারীরা তাদের তালাক দিয়েছে অথবা যে সব নারী নিজেরাই তালাক চেয়েছে, সেই সব নারীর অধিকার রক্ষা বিষয়ক ও তালাক বিষয়ে অপরারপর সমস্ত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
যে নারীর মুসলিম বিবাহ আইন অনুসারে বিবাহ হয়েছিল এবং মুসলিম আইন অনুসারে তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে কিংবা স্বয়ং তালাক চেয়েছে তাকেও তালাকপ্রাপ্ত নারীর তালিকাভুক্ত করা হবে।
তালকের দিন থেকে তিনটি ঋতু বা মাসিক হবার সময় কাল অথবা যদি ঋতু বা মাসিক না হয় তাহলে তালাকের পর থেকে তিন চান্দ্রমাস সময়কালকে মুসলিম আইনে ইদ্দ পর্ব বলা হয়।
এখন যদি গর্ভাবস্থায় তালাক হয় তাহলে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত বা গর্ভপাত হওয়া সময় পর্যন্ত সময়কে ইদ্দ পর্ব বলে গন্য করা হয়। এমতোবস্থায় যদি কোন মুসলিম পুরুষ কোন মুসলিম নারীকে তালাক দেয় তবে সেই মুসলিম নারী তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে থাকবে এবং ভরণপোষণ পাবে। আবার তালাকের আগে অথবা পরে সন্তান হলে তালাক প্রাপ্ত নারী ও তার সন্তানের ২ বছর বয়স পর্যন্ত ঐ স্বামী তার তালাক দেওয়া স্ত্রী ও পুত্রের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে। শুধু তাই নয় বিবাহকালীন সময়ে ঐ নারী তার বন্ধু, স্বামী, স্বামীর আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে যে সব উপহার পেয়েছেন তাও তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ইদ্দ পর্ব শেষ হবার পর যদি কোন তালাক প্রাপ্ত মহিলা নিজের এবং সন্তানের ভরণ পোষণে অক্ষম হয়, তখন ম্যাজিস্টেটের আছে ভরণ পোষণের জন্য আবেদন করেন সেক্ষেত্রে ম্যঅজিস্টেট প্রথমে ঐ মহিলার আত্মীয় স্বজনকে ভরণ পোষণ দেবার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। তারা সে দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করলে ব্যাপারটি ওয়াকফ্ বোর্ডের কাছে যেতে পারে।
১৯৫৪ সালের ওয়াকফ্ অ্যাকেটর ধারা অনুসারে সেই তালাকপ্রাপ্ত মহিলার বাসস্থানের এলাকার সেট ওয়াকফ বোর্ডের উপর ম্যাজিস্টেট ঐ তালাক প্রাপ্ত মহিলার ভারণ পোষণ দিতে নির্দেশ দিতে পারেন।
মুসলিম আইনে তালাক (বিবাহ বিচ্ছেদ) প্রথা
মুসলিম আইনে যে কোন মুসলমান পুরুষ তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন। এই তালাক দুভাবে হয়। ১) মৌখিক, ২) লিখিত। তা সে যেভাবেই হোক না কেন সেটা কিন্তু মুসলিম আইনে বৈধ বলে গন্য হয়। স্ত্রীর সাক্ষাতে স্বামী তিনবার তালাক -তালাক- তালাক বললেই তা গন্য করা হয়। মুসলিম আইনে তালাকের ক্ষেত্রে কোন কারণ দর্শবার
আইন জানুন ২
প্রয়োজন হয় না। অপরপক্ষে কোন মুসলমান নারী যদি তালাক চায় তবে তার স্বামীর মতামত নিতে হবে। যেটা মুসলমান নারীদের ক্ষেত্রে হয় না। স্বামীর কাছে থাকা অবস্থায় কোন মুসলমান নারী তালাক নিতে পারে না।
১৯৩৯ সালের বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের ২নং ধারা অনুযায়ী যে কোন মুসলমান মহিলা বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আদালতে আবেদন করার অনুমতি পেয়েছে। তবে সেই আবেদনর জনা একাধিক কারণ দেখতে হবে। তবেই ঐ আবেদন গ্রাহ্য হবে। সেই কারণগুলি হল-
যদি ২বছরের অধিককাল পর্যন্ত কোন স্বামী সামর্থ থাকা সত্ত্বেও তার স্ত্রীর ভরণ পোষণ দিতে অবহেলা করে। যদি সুস্থ ও সমর্থ হয়েও স্ত্রীর সঙ্গে বৈধ মিলনে অপারগ হয় এবং যদি তিন বছর ঐভাবে চলতে থাকে। যদি চার বছরের অধিকাল স্বামী নিরুদ্দেশ থাকে। যদি সাত বছরের অধিককাল স্বামীর কারাদন্ড হয়। যদি বিবাহের সময় থেকে আবেদনকারী আবেদন কাল পর্যন্ত সময় স্বামী পুরুষত্বহীন হয় এবং তা আরোগ্য হবার সম্ভাবনা না থাকে। যদি দু বছর পর্যন্ত স্বামী যৌন রোগ, কুষ্ঠরোগ বা অন্য দুরারোগ্য রোগে ভোগে। যদি স্বামী তার স্বামীর একধিক অবৈধ স্ত্রী থাকে। যদি তার স্বামী তার ধর্ম কর্মে বাধা দেয়। যদি বিনা কারণে তার মদ্যপ স্বামী তাকে প্রায়শই নির্দয় প্রহার করে। যদি বলপূর্বক তার স্বামী তাকে অনৈতিক জীবন যাপনে বাধ্য করে। উপরিউক্ত কারণ দেখিয়ে যে কোন মুসলিম মহিলা তার স্বামীকে তালাক দেবার জন্য আবেদন করতে পারেন।