দ্বিতীয় অধ্যায় – বাংলা সাহিত্যের আদি যুগ: চর্যাগীতি পদাবলী

১. সাধারণ আলোচনা

ভূমিকা

বাংলা সাহিত্যের আদিযুগের সার্থকতম নিদর্শন চর্যাগীতি। চর্যাগীতি থেকেই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস শুরু। এর মধ্যে দশম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পরিচয় মেলে। মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় নেপাল রাজদরবার থেকে ১৯০৭ সালে অনেকগুলি পুঁথির সঙ্গে ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ পুঁথিটি আবিষ্কার করেন। চর্যা আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্বে শূন্যপুরাণ, ডাক ও খনার বচন প্রভৃতি রচনাগুলিকে প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন হিসাবে তুলে ধরা হত। অবশ্য সেইসব রচনার প্রাচীনত্ব নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ ছিল। কিন্তু চর্যায় বাংলাভাষার প্রাচীনত্ব নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় চর্যাচর্যবিনিশ্চয় এবং সরহ, কৃয়াচার্যের দোঁহা ও ডাকার্ণব একত্র করে সবগুলিকে প্রাচীন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নিদর্শন মনে করে ‘হাজার বছরের পুরানো চর্যাপদ: আবিষ্কার বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোঁহা’-এই নামে ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় • সাহিত্য পরিষদ থেকে সংকলিত গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। এই পুস্তক প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিদগ্ধ সমাজে সাড়া পড়ে যায়। ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী চর্যার একটি তিব্বতী অনুবাদ আবিষ্কার করেন। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. মহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ও ড. সুকুমার সেন শাস্ত্রী মহাশয় আবিষ্কৃত পুঁথি নিয়ে গবেষণা করেন। এঁদের গবেষণায় স্থিরীকৃত হয় যে চর্যাগীতিই প্রাচীনতম বাংলা ভাষার নিদর্শন।

নামকরণ

চর্যার পুঁথির নামকরণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। সংকলটির যথার্থ কী নাম ছিল পুঁথিতে তার পরিচয় নেই। শাস্ত্রীমহাশয় নাম দেন চর্যাচর্যবিনিশ্চয়। কিন্তু বিধুশেখর শাস্ত্রী মহাশয়ের মতে পুঁথিটির নাম ‘আশ্চর্যচর্যাচয়’ হওয়াই সমীচীন। ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচীর মতে এর নাম হওয়া উচিত ‘চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয়’। আর মুনিদত্তের ‘চর্যাগীতিকোষ

বৃত্তিনাম’- নামে একটি পুঁথির উল্লেখ পাওয়া যায়। এর থেকে মনে হয় পুঁথির আসল নাম ছিল ‘চর্যাগীতি’। কোনো কোনো কবির রচনায় ‘চর্যা’ শব্দটির উল্লেখ আছে। যাহোক, দীর্ঘদিনের সাহিত্যচর্চায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ নামটি

প্রচলিত হয়ে গেছে। সংক্ষেপে একে ‘চর্যাগীতি’ বা ‘চর্যাগীতিপদাবলী’ও বলা হয়। চর্যাগীতির পুঁথিটি চতুর্দশ শতাব্দীর কাছাকাছি নকল হয়ে থাকতে পারে। এতে মোট পঞ্চাশটি পদ চব্বিশজন কবি রচনা করেন। কিন্তু তিনটি পদ ও একটি পদের শেষাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রাপ্ত পুঁথিতে মোট সাড়ে ছেচল্লিশটি পদ পাওয়া গেছে। দশম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত চর্যার রচনাকাল। চর্যার লুইপা দশম শতাব্দীতে ও কাহ্নপা দ্বাদশ শতাব্দীতে বর্তমান ছিলেন। অন্যান্য কবিরা হলেন ভসুকুভু, ডোম্বীপা, সরহপা, কুকুরী পা।

ঐতিহাসিকদের মতে দশম শতাব্দীতে সহজিয়া বৌদ্ধধর্মের আবির্ভাব ঘটে। এই সময় থেকেই চর্যাপদগুলি রচিত। চর্যাগীতির ভাষা-বৈশিষ্ট্য নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। বাংলার বাইরে রামাকান ওড়িয়া, আসাম, মিথিলা ও বিহারের পণ্ডিতরা চর্যাগীতিকে নিজেদের বলে দাবি করেছেন। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় চর্যার ভাষা, ধ্বনিতত্ত্ব, বাক্যরীতি ও শব্দার্থতত্ত্ব প্রভৃতি বিচার ও বিশ্লেষণ করে চর্যাকে একান্তভাবে বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন বলে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। চর্যার বাগ্বিধির ব্যবহার ও প্রবাদ প্রভৃতির প্রয়োগ বিচারে চর্যাপদের ভাষাকে বাংলা ভাষা বলেই মেনে নিতে হবে। জাতী চর্যাপদের অর্থ সুস্পষ্ট নয়। তাই চর্যার ব্যবহৃত ভাষাকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ‘সন্ধ্যাভাষা’

‘সহজিয়া ধর্মের সকল বই-ই সন্ধ্যাভাষায় লেখা। সন্ধ্যাভাযার মানে আলো-আঁধারি ভাষা, কতক আলো, চর্যার সন্ধ্যাভাষা কতক অন্ধকার, খানিক বুঝা যায়, খানিকটা বুঝা যায় না। অর্থাৎ এই সকল উঁচু অঙ্গের ধর্মকথার ভিতরে একটা অন্য ভাবের কথাও আছে। সেটা খুলিয়া ব্যাখ্যা

করিবার নয়। যাঁহারা সাধন-ভজন করেন তাঁহারাই সে কথা বুঝিবেন, আমাদের বুঝিয়া কাজ নাই।’ বিধুশেখর শাস্ত্রী ও ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচীর মতে চর্যাপদের ভাষা ‘সন্ধা’ ভাষা নয়- ‘সন্ধ্যা’ ভাষা হবে। সন্ধ্যা অর্থে অভিপ্রেত বা আভিপ্রায়িক বচন। সন্ধা শব্দটি চর্যায় বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে-প্রবোধচন্দ্র বাগচীর মতে এটা লিপিকরের ভুল। কিন্তু সন্ধ্যা শব্দটিকে ভুল প্রয়োগ বলা সমীচীন নয়। এ সম্পর্কে ড. শশিভূষণ দাশগুপ্তের মতে, সন্ধ্যা ও সন্ধা দুটো শব্দই রহস্যময়তা ও অস্পষ্টতা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। জ্যামের জন

সন্ধ্যাভাষা হচ্ছে রহস্যময় অর্থজ্ঞাপক ভাষা। চর্যার আক্ষরিক অর্থ এক-আর ভিতরের অর্থ অন্য বলেই তা সন্ধ্যাভাষা। যেমন-হরিণী জ্ঞানমুদ্রা, নদী ও সমুদ্র পৃথিবী, শবরী দেবী নৈরায়া, মুষিকা চিত্তপবন ইত্যাদি। বার্তাকে তি

সহজযানী বৌদ্ধসাধকদের ধর্মসাধনার প্রক্রিয়াই চর্যার বিষয়বস্তু। এই বৌদ্ধসাধকদের বলা হয় সিদ্ধাচার্য। তাঁরা ধর্মসাধনায় সহজমার্গের পথিক। সহজিয়া সাধকরা নীরস বিশুদ্ধ তত্ত্ব ও যুক্তি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি। তাঁদের মতে সহজের অর্থ সহজাত। সহজাত ধর্ম জন্ম থে কেই স্বাভাবিকভাবে জাত। তাঁদের মতে ধর্মকায় বা বোধিচিত্তের বৈশিষ্ট্য এই যে তিনি নিত্য করুণা ও আনন্দময়। এই করুণা ও আনন্দের সহজাত

চর্যার ধর্মতত্ত্ব

বোধ নিয়েই তাঁদের সাধনা। তান্ত্রিক হঠযোগ বা দেহসাধনার দ্বারাই সিদ্ধাচার্যরা জন্মমৃত্যু ও জাগতিক মায়ামমতা, সুখদুঃখের অতীত শূন্যতাবোধে করুণা বা নির্বিকল্প সুখ উপভোগ করতে চান। ‘সোনে ভরিতি করুণানাবী।। দেহসাধন, ত্রিনাড়ীতত্ত্ব ও মহাসুখ লাভই চর্যার বিষয়বস্তু। সহজিয়া সাধকরা তন্ত্রমন্ত্র ও আচার অনুষ্ঠানের বিরোধী। তাঁদের মতে দেহের সাধনাতেই পরমার্থ লাভ করা যায়। সে জন্য তাঁরা পূজার্চনা ও আচার-সংস্কারগত বাঁধা পথের ধার ধারেন না।-

‘উত্তরে উর্দু ছাড়ি মা লেয়রে বক/নিআহি বোহি মা জাহুরে লভও।

অর্থাৎ সোজা পথ ছেড়ে বাঁকা পথে যেও না। নিকটেই বোধি রয়েছে-তার জনা লঙ্কায় অর্থাৎ দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সিদ্ধাচার্যরা চর্যায় ধর্মের আচরণীয় পথের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের মতে জগতের সর্বপ্রকার ইতিবাচক ও নেতিবাচক অর্থাৎ জন্মমৃত্যু, সুখদুঃখ, আশা-নিরাশা, উত্থান-পতন, ইহকাল-পরকাল প্রভৃতি অস্তিত্ববোধের কারণ হচ্ছে মানুষের দেহস্থিত ইড়া ও পিঙ্গলানামক দুটি নাড়ি।

সাধকদের মতে মানুষের দেহে অজস্র শিরা ও উপশিরা প্রবহমান। তাদের মধ্যে প্রধান

তিনটি-ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্না। প্রথম দুটির গতি নিম্নাভিমুখী। আর সুষুম্নার গতি নাভিদেশ ব্রিদাড়ী তত্ত্ব থেকে মস্তিষ্কের ঊর্ধ্বদিকে। ইড়া পিঙ্গলা নিয়ত সুযুমার গতিকে নিম্নদিকে টেনে রাখে। সাধক সন্তর্পণে ইড়া ও পিঙ্গলার প্রভাব থেকে সুষুম্নাকে মুক্ত রেখে তাকে মস্তিষ্কের শীর্ষদেশে নিয়ে যান। তখন তাঁর এক অনির্বচনীয় আনন্দ লাভ হয়। ইড়া-পিঙ্গলাকে চর্যায় ধমন-চমন, চন্দ্র-সূর্য ও গঙ্গা-যমুনা প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়েছে। সুষুম্না হচ্ছে অবধৃতিকা বা অবধৃতি-তার আর এক নাম সহজসুন্দরী। তাকে শুন্ডিনী, চণ্ডালী, ডোম্বী ও নৈরামণি বলা হয়েছে। দেহসাধনার দ্বারা সুষুম্নানাড়ির প্রবাহকে সাধক ব্রহ্মরন্দ্র বা সহস্রার পথে চালিত করে এক অনির্বচনীয় মহাসুখ অনুভব করেন। চর্যাগীতিতে আছে-

গঙ্গা জউনা মাঝেরে বহই নাঈ।

তহি বুড়িলী মাতঙ্গী পোইআ লীলে পার করই।

মহাসুখ হচ্ছে অনির্বচনীয় অর্থাৎ বর্ণনাতীত এক আনন্দময় চরম উপলব্ধির অবস্থা।

চর্যাগীতিকারের বক্তব্য-বাকপথাতীত কহিব সে কীস-যা বাক্য গথের অতীত তাকে

ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ড. শশিভূষণ দাশগুপ্তের মতে আনন্দ চার প্রকার-আনন্দ, পরমানন্দ, বিরমানন্দ ও সহজানন্দ। সমরস হলেই সহজানন্দ হয়। সাধক যখন মহাসুখ লাভ করেন। তখন ইন্দ্রিয়গুলি অচেতন হয়ে যায়। তখন এই মায়াময় পৃথিবী সম্পর্কে কোনো জ্ঞান থাকে না। জন্ম-মৃত্যু সুখদুঃখ আপনপর

গুরুবাদ ভেদজ্ঞান ঘুচে যায়। চর্যাগীতিতে এই জগতকে মিথ্যা মায়াময় বলা হয়েছে- ‘মায়ামোহ সমুদ্রা’। চর্যার ধর্মসাধনা সহজ বলে কথিত হলেও সহজ নয়। সাধনার পথ বড়োই দুর্গম ও রহস্যাবৃত। সেই দুর্গম যাত্রায় গুরুই একমাত্র পথ প্রদর্শক। চর্যার সাধনা গুরুমুখী-এতে গুরুবাদের প্রাধান্য। গুরুর উপর নির্ভর করে, গুরু প্রদর্শিত পথে চললেই সহজানন্দ লাভ হয়। এই সাধনা খুবই রহস্যবৃত ও কঠিন বলে এক কোটি লোকের মধ্যে একজন মাত্র তা উপলব্ধি করতে পারে।

চর্যাগীতি চব্বিশ জন কবির রচিত একটি সংকলন গ্রন্থ। তিব্বতী ঐতিহ্য থেকে জানা

যায়, কবিরা অনেকেই বৃহত্তর বঙ্গের, এখনকার বাংলা, মিথিলা, উড়িষ্যা ও কামরূপের চর্যার কবি অধিবাসী ছিলেন। কবিরা একই সময়ের মধ্যে বর্তমান ছিলেন না।

এমনকি কোনো কোনো কবি অন্যদের থেকে একশত বৎসরের ব্যবধানে বর্তমান ছিলেন বলে অনুমিত হয়। চর্যার আদি কবি লুইপাদ। তিনি চতুর্দশ শতাব্দীতে বর্তমান ছিলেন।

তিব্বতী টীকাকারদের ব্যাখ্যায় চর্যার কবিদের কিছুটা পরিচয় জানা গেছে। চর্যাপদের কুকুরীপাদ, কাহ্নপাদ ও শান্তিপাদ ব্রাহ্মণবংশীয় ছিলেন বলে অনুমিত হয়। তবে চর্যাগীতিকারগণ অধিকাংশই ছিলেন নিম্নশ্রেণির বা অন্ত্যজ ম্লেচ্ছ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। তন্ত্রীপাদ ছিলেন সম্ভবত তত্ত্ববায় শ্রেণিভূক্ত। কবিরা নামের শেষে সম্ভ্রমসূচক পাদ, সংক্ষেপে ‘পা’ অভিধা

ব্যবহার করতেন। গুরুর পদ বা গুরু নির্দেশিত ধর্মের পথ অনুসারী বলেই এরূপ উপাধি গ্রহণ।

কবিদের নাম-ভুসুকুপাদ, ডোম্পীপাদ, সরহপাদ, কুকুরীপাদ, লুইপাদ প্রমুখ। সরহপাদ, ভুসুকুপাদ লুইপাদ অপেক্ষা বয়ঃকনিষ্ঠ ছিলেন।

২. চর্যায় সমাজচিত্র

চর্যাগীতিকাররা একই সঙ্গে সাধক ও কবি। সাধনতত্ত্বের দিক থেকে সমস্ত চর্যাগানের বিষয়বস্তু একই-ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্নার কথা। কিন্তু সেই সাধন প্রণালী প্রত্যেক সাধকের ভূমিকা আপন অনুভূতির রসে বৈচিত্র্যমন্ডিত হয়ে উঠেছে। নিরবয়ব গুহ্যতত্ত্বকে প্রকাশ করতে গিয়ে সাধকরা সমসাময়িক সমাজজীবন থেকে রূপক ও চিত্রকল্প গ্রহণ করেছেন। তাই চর্যায় সমসাময়িক বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সামাজিক জীবনযাত্রার কাহিনি স্থান পেয়েছে। চর্যার সময়ে পাল ও সেন রাজাদের আমলে বাংলার ভৌগোলিক সীমা আজকের থেকে অনেক দূর বিস্তৃত ছিল। মগধ থেকে কামরূপ পর্যন্ত তখন বাংলার শাসনাধীন। চর্যাপদে নৌকা বাওয়া, খেয়াপারাগার ও পারিবারিক দারিদ্র্য এবং বাংলার তাঁতী, ডোম ও ব্যাধ প্রভৃতিকে নিয়ে যেসব জীবনচিত্র পাওয়া যায় তা বৃহত্তর বাংলারই অঙ্গ।

চর্যাগীতিতে খাল, বিখাল, নদীনালার, বিশেষত নৌকাযাত্রার অতিরিক্ত উল্লেখ থাকায় নদীমাতৃক বাংলাদেশের কথাই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। নদী, নৌকা, নদীর উপরে সাঁকো, কেডুয়াল, দাঁড়টানা, গুণটানা, পালতোলা, সেঁউতি, কাছি, খুন্টী, উজান বাওয়া প্রভৃতি নদী ও নৌকা সংক্রান্ত অনেক বিষয়ের উল্লেখ চর্যাগীতিতে পাওয়া যায়। তাছাড়া মেঘ, সরোবর, বিস্তৃত মাঠ ও মুকুলিত বৃক্ষশাখার কথা কয়েকটি চর্যায় পাই। নৌকা চালনার চিত্র বহু পদে রয়েছে।

পর্বত, অরণ্য ও হরিণ শিকারের কথাও আছে। এর থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে তখন বাঙালিদের প্রিয় ছিল হরিণের মাংস। কাহ্নপার একটি চর্যায় জাল ফেলে মাছ ধরার কথা আছে। মৎস্যপ্রিয় বাঙালির স্বাভাবিক জীবনচিত্র এতে ফুটে উঠেছে।

চর্যার যুগে বর্ণাশ্রম প্রথা ও অস্পৃশ্যতা উৎকটভাবে বিদ্যমান ছিল। অভিজাত শ্রেণির লোকেরা নিম্নশ্রেণির লোকদের সম্পর্কে দারুণ ঘৃণা, অবজ্ঞা ও বিরূপতা পোষণ করতেন। অন্ত্যজ শ্রেণির লোকেরা উচ্চবর্ণ ও ধনিক শ্রেণি অধ্যুষিত নগরে বাস করার সুযোগ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত ছিল। ডোম, শবর ও চন্ডাল প্রভৃতি মানুষেরা নগরের বাইরে অরণ্যসংকুল পার্বত্য অঞ্চলে কুঁড়েঘরে বসবাস করত। এরা ছিল উচ্চবর্ণের অস্পৃশ্য। কাহ্নপা লিখেছেন-

‘নগর বাহিরি রে ডোম্বী তোহোরি কুড়িআ/ছোই ছোই জাহ সো বায় নাড়িআ।।’

চর্যাকারেরা জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। তথাকথিত উচ্চবর্ণের

সঙ্গে ডোম নারী ও চন্ডাল নারী বিবাহের কথা চর্যায় পাওয়া যায়। চর্যায় কৃষিকাজ, পশুশিকার, মৎস্যশিকার ও অন্যান্য নানা বৃত্তি অবলম্বন করে যারা

জীবিকা নির্বাহ করে তাদের কাহিনি অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে চিত্রিত হয়েছে। সাধারণ শ্রেণির লোকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মান অনেক নীচু ছিল। উচ্চশ্রেণির লোকেরাই সবরকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেন। ডোমদের প্রধান বৃত্তি ছিল ঝুড়ি, চাঙ্গারি প্রভৃতি

তৈরি ও বিক্রি করা। ডোম মেয়েরা এসব কাজে পুরুষদের সাহায্য করত। ডোম মেয়েরা শেয়া পারাপারের নৌকাও বাইত। এছাড়া মাদুর বোনা, তাঁতে কাপড় বোনা, মাছ ধরা, মদ চোলাই করার কথাও রয়েছে। মাঝিমাল্লার বৃত্তি, কাঠুরিয়ার বৃত্তি, জুতোরের বৃত্তি প্রভৃতি ছিল জীবিকা অর্জনের প্রধান উপায়। ভিক্ষাবৃত্তি, হাতিধরা, বাণিজ্যযাত্রা বৃত্তির ইঙ্গিতও চর্যায় আছে। দেশে তখন চুরি ডাকাতি ছিল। চুরি ডাকাতি নিবারণের জন্য তালাচাবির ব্যবহার করা হত। প্রহরী ও কোটাল নিয়োগের ব্যবস্থাও ছিল।

পারিবারিক জীবন ছিল একান্নবর্তী। শ্বশুর-শাশুড়ি-ননদ ও পুত্রবধূ-সকলকে নিয়ে ছিল বিরাট পরিবার। এই পারিবারিক সম্পর্ক বেশ সুদৃঢ় ছিল। সেখানে স্বেচ্ছাচারের কোনো অবকাশ ছিল না। তবে নিম্নশ্রেণিয়দের মধ্যে নৈতিক শিথিলতা ছিল বলে মনে হয়। শ্বশুরকে ফাঁকি দিয়ে রাত্রে বাড়ির বউ অভিসারে যাচ্ছে, পরস্ত্রীর প্রতি আসক্তি, নিম্নবর্ণীয় নারীর সঙ্গে উচ্চবর্ণের পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক, শুঁড়ির দোকানে বসে মদ্যপান-প্রভৃতির যেসব চিত্র চর্যায় রয়েছে তাতে মনে হয় সে যুগে সমাজের কোনো কোনো স্তরে যৌন ব্যভিচার ছিল। পটহ, মাদল ও দুন্দুভি প্রভৃতি নানা প্রকার বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বেশ ঘটা করে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হত। খেলাধুলার মধ্যে দাবা খুব জনপ্রিয় ছিল। নাটক ও নৃত্যগীতের প্রতি বাঙালির বিশেষ ঝোঁক ছিল। নিম্নশ্রেণির নারীসমাজে নৃত্যগীতের প্রথা প্রচলিত ছিল। মেয়েরা নৃত্যগীতে খুব নিপুণ ছিল। মেয়েরা নাচত, পুরুষরা গান করত। সে যুগে নিম্নজাতীয় ভোম্বী, চণ্ডালী ও শবরী প্রভৃতি নারীগণ সিদ্ধাচার্যদের সাধন-সঙ্গিনী হত। অনেক সময় তারা স্বামীপুত্র পরিজন পরিত্যাগ করে যোগিনী সাজত।

গহনার মধ্যে নূপুর, কঙ্কণ, মুক্তাহার, কাণেট ও কর্ণকুন্ডলের উল্লেখ আছে। মুখ দেখা ও চুল বাঁধার জন্য আয়না ব্যবহৃত হত। তাম্বুলবিলাসীরা কপূর দিয়ে পান খেতেন। বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে কাড়ানাকাড়া, পটহ-মাদল, একতারা, কাঁসি, ডমরু, বীণা ও বাঁশি প্রভৃতির উল্লেখ রয়েছে। গৃহস্থ ঘরের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের মধ্যে হাঁড়ি, পেটা, ঘড়া ও গাড়ুর উল্লেখ আছে। কুঠার, খন্তা ও টাঙ্গি প্রভৃতি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হত। খাট, পিঁড়ি ও মাদুরের ব্যবহার ছিল।

খাদ্য ও পানীয়ের মধ্যে ভাত, দুধ, লাউ, মাছ, মাংস, মধু ও তেঁতুল প্রভৃতির উল্লেখ আছে। এ ছাড়া কুঁড়েঘর, ঠাকুরঘর, আঁতুড়ঘর ও ভাঁড়ারঘরের উল্লেখ আছে। গৃহস্থের ঘরবাড়ি, উঠোন, মেয়েমহল। কৃষিজাত দ্রব্যের মধ্যে ধান, পান ও কার্পাসের পরিচয় পাওয়া যায়। লোহা, কাঁসা প্রভৃতি ধাতুনির্মিত দ্রব্যের উল্লেখ আছে। সোনা ও রূপার উল্লেখও পাওয়া যায়।

৩. চর্যার সাহিত্যমূল্য

চর্যার বিষয়বস্তু ধর্মকেন্দ্রিক। দেহ-সাধনার গুহ্যতত্ত্ব চর্যার সমস্ত পদে প্রকাশ পেয়েছে।

সিদ্ধাচার্যরা মরজীবনের আধিব্যাধি, জন্মমৃত্যু ও সুখদুঃখের ঊর্ধ্বে মহাসুখ লাভ করতে

চেয়েছেন দেহ-সাধনার মাধ্যমে। তাই স্বভাবতই মনে হতে পারে চর্যাকাররা জীবনের

কান্নাহাসির তরঙ্গ থেকে পলাতক। সুতরাং যে ধর্মতত্ত্বকথা জীবনের রাগরাগিণীর সংস্পর্শশূন্য তা রসবস্তুর পর্যায়েই পড়ে না।

বস্তুত আমাদের একটি ভ্রান্ত ধারণা এই যে, ধর্মের সঙ্গে সাহিত্যের যেন অহি-নকুল সম্পর্ক রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তা নয়। সাহিত্য যে-কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে রচিত হতে পারে। সাহিত্যে বিষয়বস্তুটাই বড়ো কথা নয়। অর্থাৎ কী বলছি সেটাই প্রধান নয়, কেমন করে বলা হচ্ছে সেটাই সাহিত্যের রসবিচারে প্রধানত বিবেচ্য।

চর্যাপদ রচয়িতারা ধর্মতত্ত্বের কথা বলতে গিয়ে সাধারণ মানুষের সমাজজীবন থেকে প্রতীক ও চিত্রকল্পাদি গ্রহণ করেছেন। নিজেদের সাধনালব্ধ অতীন্দ্রিয় অনুভূতিকে মানবজীবন চর্যার সাহিত্যমূল রসসিক্ত করে তুলেছেন। এই রূপ-সচেতনতা ও প্রগাঢ় জীবনবোধের জন্য চর্যাগীতিগুলি জীবনলীলার বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। চর্যায় নরনারীর বিচিত্র কাহিনি, বাংলাদেশের গাছপালা, নদ-নদী, খাল-বিখাল প্রভৃতির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব শিল্পমূল্য লাভ করেছে। সেজন্য চর্যাগীতি রসিক চিত্তকে সহজে রসানন্দে উদ্বেজিত করে। খরস্রোতা নদীর বর্ণাঢ্য চিত্র অঙ্কন করতে গিয়ে চর্যাকাররা সুখদুঃখ মায়ামমতাভরা অশান্ত অস্থির ক্ষণস্থায়ী ও নিত্য যন্ত্রণাময় মানবজীবনকেই ব্যঞ্জিত করে তুলেছেন। শব্দে ছন্দে অলংকারে সে বর্ণনা চিত্ররূপময়। কবি চাটিলপা বলেছেন: ওয়ানকে

ভবনঈই গহন গম্ভীর রেগে বাহী/দুআন্তে চিখিল মাঝে ন থাহী।।

সম্পাদানে ভীড়তে চিংগামার্থে চাটিল সাঙ্কম গঢ়ই/পারগামী লোঅ নিভর তরই।।

হরিণ শিকারের কাহিনিতে পশু-জীবনের অব্যক্ত মর্মযন্ত্রণার অভিব্যক্তির মধ্যে মুক্তি-

পিপাসু মায়াবদ্ধ মানবাত্মার ক্রন্দন ধ্বনিত হয়েছে।

অ্যাকাহেরে ঘিনি মিলি অচ্ছতু কীস/বেঢ়িল হাঁক পড়অ চৌদীস।।

আপনা মাংসে হরিণা বৈরী। খনহ ন ছাড়অ ভুসুক অহেরী।।

তিন ণ জুপই হরিণা পিবই ণ পাণী। হরিণা হরিণীর নিলঅ ন জানী।।

চর্যায় সুষুন্না হচ্ছে সহজ সুন্দরী। তাকে যোগিনী, ডোম্বী ও শবরী প্রভৃতি নামে অভিহিত

করা হয়েছে। সুষুম্নার প্রসঙ্গে চর্যাকাররা রোমান্টিক প্রণয় ও জীবনভোগের সুন্দর চিত্র তুলে ধরেছেন। শবরপার পদে পাই: উঁচু পর্বতে বাস করে শবরী বালিকা। তার মাথায় ময়ূরপুচ্ছ, গলায় গুঞ্জার মালা। নানা তরুবর মুকুলিত

হল-তার ডালপালা আকাশ ছুঁয়ে গেল। শবর শবরীর জন্য পাগল। কামনার রঙে তাদের হৃদয় রঙিন ও

উত্তাল। খাট পড়ল, শয্যা পাতানো হল। শবর-শবরী প্রেমাবেশে সারা রাত কাটাল। আলোচ্য অংশে ললিত বসন্তে প্রকৃতির রম্য পরিবেশে প্রেমিক-প্রেমিকার জীবনানুরাগের আবেগচঞ্চল রোমান্টিক অনুভূতি রাগরক্তিম সৌন্দর্যব্যঞ্জনায় রসমণ্ডিত হয়ে কাব্যশ্রী লাভ করেছে।

অনুরূপ দেহানুরাগের অনুভূতি প্রগাঢ় হয়ে উঠেছে গুন্ডরীপা-এর একটি পদে-

জোইনি তঁই বিণু খনহি ন জীবমি তো মুহ চুম্বী কমল রস পীবমি।। চায়ের সিদ্ধাচার্য যোগিনী ছাড়া এক মুহূর্তও বাঁচবেন না। যোগিনীর মুখ চুম্বন করে তিনি কমলরস বা পদ্মমধু পান

করবেন। দেহানুরাগ এখানে উজ্জ্বল স্ফটিক খন্ডের মতো অপূর্ব কাব্যশ্রী লাভ করেছে।

চর্যার অনেক পদে উদ্ভট অসম্ভব বিষয়বস্তুর অবতারণা ঘটেছে। এর ফলে সেই সব রচনায় যে হাস্যরস সৃষ্টি হয়েছে তা সাহিত্যমূল্যে উন্নীত:

স্ত্রী কচ্ছপকে দোহন করে তার দুধ পাত্রে রাখা যাচ্ছে না। গাছের তেঁতুল কুমির খেয়ে ফেলেছে। দিনের যেলা বাড়ির বহু কাক দেখলে ভয় পায়- অথচ রাত্রে পরপুরুষের বাড়ি চলে যায়।

হাস্যরস আবার কোথাও সামাজিক অসংগতির প্রতি বিদ্রূপে উচ্ছল হয়ে উঠেছে। কাহ্নপার পদে আছে নিম্নজাতের ডোম রমণীকে তিনি বিয়ে করেছেন- এতে তাঁর জাত যাবার কথা, কিন্তু জাত যায়নি-কারণ তিনি প্রচুর মূল্যের যৌতুক পেয়েছেন। এতেই তাঁর জাতিকুল শীল মান রক্ষা পেয়েছে।

ডোম্বি বিবাহিআ অহারিউ জাম।জউতুকে কিঅ আণুতু ধাম।।

বাংলা সাহিত্যের প্রধান ধর্ম গীতিপ্রাণতা। চর্যাগীতিতে বাংলাসাহিত্যের জন্মক্ষণে সেই গীতিপ্রাণতার বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। আধুনিক গীতিকবিতা হচ্ছে কবির ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতি সুখদুঃখ আনন্দবেদনা ও আশানিরাশার স্বতঃস্ফূর্ত স্বচ্ছন্দ অভিব্যক্তি। এটা স্বীকার করতেই হবে যে, চর্যাগীতিতে একটি বিশেষ ধর্ম-চেতনাই প্রাধান্য পেয়েছে। ব্যক্তিহৃদয় সেখানে চাপা পড়ে গেছে। তবে একটা ধর্মীয় আদর্শকে প্রকাশ করতে গিয়ে কবিরা ব্যক্তিগত অনুভূতিকেই ছন্দোবদ্ধ করে তুলেছেন। তাই সিদ্ধাচার্যদের মনঃপ্রকৃতির সঙ্গে সমাজজীবনের ঘটনাবৈচিত্র্য লীলায়িত হয়ে উঠেছে।

চর্যা সম্প্রদায়বিশেষের ধর্ম হলেও তার মধ্যে বাংলাদেশের রাঙামাটি, আলো, জল, হাওয়ার সংস্পর্শ বেশি। চর্যায় বাংলাদেশের প্রকৃতি-গাছপালা, দিগন্তবিস্তৃত মাঠ, নদনদী, পাহাড় পর্বত অরণ্য, জ্যোৎস্নাবিকশিত রজনী, পশুপক্ষী, ঘরসংসার বহুস্থলেই রসমণ্ডিত হয়ে উঠেছে। ছন্দ-অলংকার ও চিত্রকল্প প্রয়োগের ক্ষেত্রে চর্যাকাররা অসামান্য কবিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।

১। কে কোথা থেকে ‘চর্যাপদ’ আবিষ্কার করেন? বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব

কতখানি? সংক্ষেপে চর্যাপদের সাহিত্যমূল্য আলোচনা করো।

(উ. মা. ১৯৮৬, ১৯৯৮)

২। টীকা লিখ: প্রাচীন যুগের বাংলা সাহিত্য, চর্যাপদ।

(১৯৮৮ উ. মা.)

৩। চর্যাপদ বলতে কী বোঝ? কোথা থেকে কে এগুলি আবিষ্কার করেন? তিনজন চর্যাপদকারের নাম লেখো। চর্যাপদের সাহিত্যমূল্য বিচার করো। (উ. মা. ১৯৯৪)

৪। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন কোন্ রচনায় পাওয়া যায়? এর আবিষ্কর্তা কে? এর রচনাকাল সম্পর্কে কী অনুমান করা হয়? এই রচনায় সাহিত্যগুণ ও সমকালীন সমাজজীবনের কীরূপ পরিচয় মেলে আলোচনা করো।

(উ. মা. ১৯৯৬)

৫। চর্যাপদের পুঁথি কে কবে আবিষ্কার করেন? চর্যাপদ কারা কোন্ সময়ে রচনা করেন? চর্যাপদের সাহিত্যমূল্য নির্ধারণ করো। (উ. মা. ১৯৯৮)

৬। ‘চর্যাপদ’ কীভাবে আবিষ্কৃত হয়? বাংলা ভাষার ইতিহাসে চর্যাপদের লোকজীবনের যেসব চিত্র পাওয়া যায় তার উল্লেখ করো। গুরুত্ব কোথায়? চর্যায় (উ. মা. ২০০২)